দেশে বিকাশমান ই-কমার্স খাতে এই ‘শিক্ষা হওয়ার’ ঘটনা প্রভাব ফেলেছে ব্যবসার ওপর। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করা সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোও বিপাকে পড়েছে। তিন ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা সামনে আনছেন উদ্যোক্তারা। যেমন ১. সার্বিকভাবে পণ্য বিক্রি কমেছে। কারও কারও ক্ষেত্রে বিক্রি না কমলেও বাড়ার হার কমেছে। ২. আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক ক্রেতা এখন পণ্য হাতে পেয়ে তারপর মূল্য পরিশোধ করছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সরবরাহকারী বাকিতে পণ্য দিতে রাজি হচ্ছেন। এতে প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ বেশি লাগছে, যা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ৩. নতুন ক্রেতা যুক্ত হওয়ার প্রবণতা কমেছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকেরডিলডটকমের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, তাঁর পর্যালোচনা অনুযায়ী পুরো ই-কমার্স খাত মিলিয়ে ফরমাশ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু হয় মোটামুটি এক দশক আগে। তবে এই ব্যবসা কিছুটা গতি পেতে থাকে ২০১৩ সাল থেকে। ওই বছর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দেশে তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রি-জি) চালু হয়। সুসময় তৈরি হয় করোনাকালে। অনলাইনে চাল-ডাল থেকে শুরু মোটামুটি সব পণ্যই কিনতে শুরু করেন ঘরবন্দী ক্রেতারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক হাজার ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) জানিয়েছে, তাদের সদস্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৬০৯টি। তবে এই তালিকায় ফেসবুকভিত্তিক পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
* বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে ১ হাজার ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তদন্তের মুখে ১৪টি। * দুই বছরে বাজার বেড়েছিল ৫০% হারে।
ই-কমার্স খাতের লেনদেন ও বাজার বাড়ার হারের একটা ধারণা পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে। তাদের হিসাবে, গত জুনে ই-কমার্স খাতে ব্যাংকের কার্ডে লেনদেন হয় ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬০ শতাংশ বেশি। মুঠোফোনে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের লেনদেন এই হিসাবের মধ্যে নেই।
ই-ক্যাব বলছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে ই-কমার্স খাতে বাজার বাড়ে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে। বাজারের আকার বছরে ১৬ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। যদিও এ নিয়ে জরিপভিত্তিক হিসাব নেই।
রমরমা অবস্থায় সমস্যা তৈরি করে কিছু প্রতিষ্ঠান, যারা অস্বাভাবিক মূল্যছাড় দিয়ে সন্দেহজনক ব্যবসায়িক কৌশলে ক্রেতার কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছে। এখন কাউকে টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মালিকেরা এখন কারাগারে। একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক আত্মগোপনে। অনুসন্ধান চলছে মোট ১৪টি নিয়ে।