কোনো সংশয় কি ছিল? ড্যারিল মিচেল এখানে কাইল মেয়ার্স হয়ে উঠবেন কি না, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সেই চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনের মতো অভাবনীয় কিছু হবে কি না, এমন কিছু অবশ্য টুকটাক ভাসছিল বাতাসে। তবে ওসব তো এক জীবনে একবারই হয়। এবার যেমন হলো না। মিচেলকেই সবার আগে ফেরাল বাংলাদেশ। এরপর কাঙ্ক্ষিত সেই জয়ের দেখা পেতেও সময় খুব একটা লাগল না।
নান্দনিক সৌন্দর্যের সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জয়ের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল আগের দিনই। সেখানেই শেষ দিনে আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়ে এগিয়ে গেল দুই ম্যাচের সিরিজে।
গত বছর নিউ জিল্যান্ডকেই তাদের মাঠে টেস্টে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের সেই জয়কে মনে করা হয় বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরা জয়। এবারও এই সিরিজে দুই দলের শক্তি-সামর্থ্যের যে তারতাম্য, ম্যাচ শুরুর আগের যে নানা পারিপার্শ্বিকতা, পূর্ণ শক্তির নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-লিটন-তাসকিন-ইবাদতকে ছাড়া সিলেটের এই জয়ও থাকবে বাংলাদেশের সেরা জয়গুলির ছোট্ট তালিকায়।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের দুই আসর মিলিয়ে বাংলাদেশের জয় ছিল স্রেফ একটি। এবার যাত্রা শুরুই হলো জয় দিয়ে।
তবে সবচেয়ে বেশি ছাপ রেখেছেন নিঃসন্দেহে তাইজুল ইসলাম।
যার হাত ধরে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, শেষ দিনে সেই তাইজুলই দলকে পার করালেন শেষের বৈতরণী। শেষ দিনে তিন উইকেটের দুটিই তার, আরেকটি উইকেটেও অবদান তার ক্যাচের।
প্রথম ইনিংসের ৪টির সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি, ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ পেলেন তাইজুল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই প্রথম ১০ উইকেট নিতে পারলেন বাংলাদেশের কোনো বোলার।
দিনের শুরুতে ড্যারিল মিচেল ও ইশ সোধি প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিছুটা। তাইজুলের করা দিনের প্রথম বলটিই নিচু হয়ে যায় অনেকটা। এরপর তার আরও দু-একটু ডেলিভারি একটু নিচু হয়। তবে খুব বিপজ্জনক কিছু দেখা যায়নি। ৪৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা মিচেল ফিফটি করে ফেলেন অনায়াসেই।
তবে দিনের দশম ওভারে ভেঙে যায় তার প্রতিরোধ। নাঈম হাসানে বলে সুইপ করেন তিনি, একটু বাড়তি বাউন্স থাকায় বল উঠে যায় ওপরে। স্কয়ার লেগে তাইজুল ইসলামকে একটু অপ্রথাগত পজিশনে রেখেছিলেন অধিনায়ক শান্ত। বল যায় সেখানেই। ডাইভ দিয়ে ভালো ক্যাচ নেন তাইজুল।
৩৪ রানে তাকে বিদায় করেই ইনিংসের পঞ্চম শিকার ধরেন তাইজুল। প্রায় দুই ঘণ্টা ক্রিজে থাকা সোধিকে ফিরিয়ে তিনিই শেষ করে দেন ম্যাচ। পূর্ণ করেন ম্যাচে তার ১০ উইকেট।
শেষটুকু তার হাত দিয়ে হতেই হতো। এই ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক কারণেই। তবে সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে তো তাইজুলের টেস্ট হিসেবেই!
চায়ের শহর সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্যের এই স্টেডিয়ামে আগের একমাত্র টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে বাজেভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার এই মাঠ স্বাক্ষী হলা স্মরণীয় এক জয়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩১০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩৩৮
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩২, আগের দিন ১১৩/৭) ৭১.১ ওভারে ১৮১ (মিচেল ৫৮, সোধি ২২, সাউদি ৩৪, এজাজ ০*; শরিফুল ৬-২-১৩-১, মিরাজ ১৫-৪-৪৪-১, তাইজুল ৩১.১-৮-৭৫-৬, নাঈম ১৭-৩-৪০-২, মুমিনুল ২-০-৫-০)।
ফল: বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম।