আমি জানতাম একুশে পদক দেওয়া হয় মেধাবী যোগ্য এক অনন্য অসাধারণ ব্যক্তি দেখে। দেশ ও জাতির প্রতি বিশেষ অবদান যার আছে। যিনি বিশেষ গুণের অধিকারী। নিঃস্বার্থ ভাবে দেশ ও মানুষের কাজ করে অসামান্য অবদান রেখেছেন। কেবলমাত্র তাদেরকে একুশে পদকের মত সম্মাননা দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়।
কিন্তু আমার মাথায় ধরে না শুভ্র দেবের মত সঙ্গিতশিল্পী কি ভাবে একুশে পদকের জন্য নির্বাচিত হয়। উনি নব্বই দশকে দুই একটা গান গেয়েছেন মাত্র। এই দুই একটা গান ছাড়া তার তেমন আর কোন উল্লেখযোগ্য হিট গান নাই। আর শুনলাম ১২ বছর বয়সে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছিলেন নাকি?
শুভ্র দেব মানুষ হিসেবে কেমন তা যতটুকু জানলাম উনার একটা ভিডিও দেখে। উনি একজন অহংকারী লোভী ও তেলবাজ। নিজের ঢোল নিজে পেটাতে ভালোবাসেন। এমন একজন ব্যক্তিকে একুশে পদক দিয়ে সারাদেশে বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক হয় নাই। দেশে উনার চাইতে যোগ্য মেধাবী ও কিংবদন্তি সঙ্গিতশিল্পী রয়েছেন। উনাদেরকে বঞ্চিত করে শুভ্রদেবকে একুশে পদক দেওয়াটা দূঃখজনক। ৯৮/৯৯ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষ্ঠানে শুভ্র দেবের ‘এমন আমার পাথর তো নয়”, ‘কাল সাপ ঢুকেছে আমার সোনার বাসর ঘরে’ সহ কয়েকটা গান শুনেছিলাম। এরপর দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও আর তাঁর তেমন কোন গান শুনি নি। মানুষের জন্য, দেশের জন্য, জাতির জন্য, গানের ভূবনে উনি কি দিয়েছেন তা আমার বোধগম্য নয়। তবে বাই দ্যা বাই শুনেছি ড. মাহফুজুর রহমান, ইভা রহমান (সাবেক) এর মতো শিল্পী সৃষ্টি করেছেন। করেছেন তাঁদের মতো উচ্চ পদস্থদের চামচামি। আর তিনিই কিনা হাজার হাজার গানের গীতিকার ও সুর স্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদ কে নিয়ে যে হিংসাত্মক/অপমানজনক মন্তব্য করলেন তা বাঙালী জাতি কিভাবে মেনে নেবে? অবশ্য এ যুগে অনেক কিছুই মেনে নিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।
প্রিন্স মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে যা বলেছেন তা তিনি বলতেই পারেন। এটা বলার অধিকার বা একুশে পদক ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করতেই পারেন। সে অনুরোধ রাখা না রাখা সেটা শুভ্র দেবের ব্যাপার। এবারে প্রিন্স মাহমুদ এর বিষয়ে কিছু বলি।
প্রিন্স মাহমুদ কি জিনিস তা সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে। সো আমি মনে করি না প্রিন্স মাহমুদ ভাইয়ের কোন ব্যখা দেওয়ার দরকার আছে। আর শুভ্র দেব (অনেকে বলছেন তেলবাজ দেব) ঠিক বলেছে, প্রিন্স মাহমুদ ভাই ওনার লেভের না। কারণ, প্রিন্স ভাইতো ওনার চেয়ে হাজার গুন উপরের লেভেলের মানুষ। প্রিন্স ভাইয়ের যে পরিমান কালজয়ী গান আছে তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুনবে। সব জেনারেশনের মানুষের হৃদয়ে প্রিন্স ভাই আজীবন থাকবেন। কিন্তু তেলবাজের দু’একটা গান ছাড়া আমার মনে পরেনা আর কোন হিট গান আছে। তেলবাজের হিট গান বর্তমান প্রজন্ম শোনে বলে আমার মনে হয়না। প্রিন্স মাহমুদ এরকম হাজারো শুভ্র দেব গড়ার কারিগর।
বাংলা আধুনিক ব্যান্ড সঙ্গীতে বাচ্চু, জেমস, বিপ্লব, হাসান, পথিক নবী, আসিফদের অবদান কারোই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সেই সময়ের ব্যান্ড সঙ্গীতে অসাধারণ সব গান লিখেছেন প্রিন্স মাহমুদ।
মনে পড়ে ২০০০ সালের সমসাময়িক বছর গুলোয় অনেক ব্যান্ডের এলবামের পেছনে নাদুস-নুদুস চেহারায় গোলগোল চশমা পড়া একটা লোকের সাদাকালো ছবি দেখা যেতো, তিনিই প্রিন্স মাহমুদ।
শুভ্র দেব বলছেন প্রিন্স মাহমুদ তার লেভেলের না। তার কথার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি। প্রিন্স মাহমুদ তার লেভেলের না, প্রিন্স মাহমুদ অন্য লেভেলের। ওই সময়ের ইয়াং জেনারেশনকে গানের মধ্যে আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা শেখানো কয়েকজনের মধ্যে একজন প্রিন্স মাহমুদ।
এখানে প্রিন্স মাহমুদ ভাই তো কখনো বলেন নি বা বলছেন না যে একুশে পদক শুভ দেব পেলো, আমি কেন পেলাম না। অনেক হুজেগে বাঙালী ভাবছে প্রিন্স মাহমুদ জেলাস ফিল করছে। আদতে তা কিন্তু নয়। শুভ দেবের চেয়ে হাজারগুণে গুণান্বিত গানের কারিগর আছেন যারা একুশে পদক পাচ্ছেন না। তাঁরা এটা পাওয়ার প্রাপ্য, দাবিদার। সেখানে অযোগ্য শুভ দেব পেয়ে যাচ্ছেন একুশে পদক। এই পদক নিয়ে প্রিন্স মাহমুদ ভাইয়ের আগেই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমার টাইম লাইনে গিয়ে দেখতে পারেন।
যাই হোক, আমার মতো একজন অতি ক্ষুদ্র মিডিয়া কামলা হিসেবে এর চেয়ে বেশি বলার দুঃসাহস দেখানোর এখতিয়ার নেই। যতটুকু বুঝেছি ততটুকুই লেখার চেষ্টা করেছি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সূত্রঃ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।