*** সিনেমার নাম পদ্মাপুরান ***
চমকের তালিকা:
পোস্টার ট্রেইলার দেখে যে ধারণাটা ছিল গল্প নিয়ে, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে সিনেমা দেখতে বসে। ময়নার পরিচয় এভাবে সামনে আসবে চিন্তায় ছিল না। অন্যদিকে গোলাপীর এভাবে পরিচয় বদলে যাবে সেটা তো ছিল কল্পনারও বাইরে। আর জয়রাজের স্ত্রীর চরিত্রটির শেষাংশটা আবারো গল্পের বাঁক এমনভাবে খেলে দিলো যে ‘আহ’ থেকে ‘আহারে’ হয়ে গেল। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানের যে পদ্ধতিগুলো সামনে এসেছে সেটাও ছিল অজানা এবং একই সাথে এডভেঞ্চারাস। তবে পোস্টারের টাক মাথার গর্ভবতী নায়িকা দেখে কতকিছুই না মাথায় ছিল। কিন্তু যে কারণে এই টাক মাথা, তা সিনেমা না দেখে কোন দর্শক কল্পনাতেও মেলাতে পারবে না।
দর্শক হিসেবে এই বোকা হওয়াটা তৃপ্তিদায়ক।
যা ভাল:
১. “আহা প্রসুন আহা প্রসুন” এভাবে ৫ বার বলার পর বাকি কথা হবে। আহা, যা একটা হাসি দিলো। কলিজা ফারাফারা। আশা করবো আগামী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেত্রী’ তালিকায় এগিয়ে থাকবেন।
২. ‘হেদায়েত নান্নু’ আপনে কে ভাই! দুম করে স্ক্রীন দখল করে নিলেন। বান্টি ভাই’র পর এভাবে কেউ দুম করে এসে স্ক্রীন দখল করে নিলো। ন্যাচারাল কমেডি ছিল। রবীন্দ্রনাথের সাথে কি গপ্প হয়েছিল জানাবেন।
৩. আশরাফুল আশীষ ভাই, খেলোয়ার চিনতে ৯০ মিনিট লাগে না। ২ মিনিটই যথেষ্ট।
৪. সিনেমায় সুমিতের লুক মাশাল্লাহ। এই লুকটাকে কাজে লাগানো উচিত। তার আগের সিনেমাগুলোর ট্রেইলার দেখার পরই আফসোস হয়েছিল। এবার মনে হয়েছে তাকে পারফেক্ট লুক দেয়া হয়েছে।
৫. সবগুলো গান আলাদাভাবে ভাল লাগার। ‘চোখে জল’ (সম্ভবত) গানটা আলাদাভাবে ভাল লেগেছে সুর এবং কথায়। আগামী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এই সিনেমার গানের কারিগররা প্রতিযোগীতায় থাকবেন বলে আশা রাখছি।
৬. এনিমেশন টাইটেলটা খুবই ভাল লেগেছে।
যা ভাল না:
১. ক্যামেরার তেমন কোন ভুমিকা ছিল না ভিডিও ধারণ ছাড়া।
২. গল্পের গতি কম।
৩. বোধহয় শীতের শুরু/শেষে শুটিং করা। ফলে নদীর পাড়ের বড় শটে আকাশ সব সময় সাদা থাকায়, স্ক্রীনেও সেটা বাজে প্রভাব ফেলেছে।
৪. মাঝেমধ্যে আসা অতি জীবনবোধের সংলাপগুলো আরোপিত লেগেছে।
৫. গল্প যথেষ্ট ভাল। সেখানে চমকও ছিল। তারপরও পুরো সিনেমা ঘিরে কি যেন নেই। একটা ফাঁকা ফাঁকা ব্যপার ছিল।
বি.দ্র.:
যারা সব রকম সিনেমা দেখতে অভ্যস্থ তারা সিনেমাটা দেখতে পারেন। যারা একটু ধীর গতির জীবনের গল্প দেখতে পছন্দ করেন, তারাও সিনেমাটি দেখতে পারেন। যারা একটু চমক বা নতুনত্ব পছন্দ করেন তারাও দেখতে পারেন। তবে যারা অতি ফ্যান্টাসী, মাসালাদার সিনেমা পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই সিনেমাটি কোনভাবেই নয়।
সিনেমাটি আমার কাছে সেই অর্থে ভাল লেগেছে তা বলবো না। তবে সিনেমার অনেককিছু বেশ ভাল লেগেছে। তবে ভাল লাগা না লাগা যার যার তার তার। হলে বসে বাংলাদেশী সিনেমা দেখুন। আপনার ভাল লাগা মন্দ লাগা জানান। তাতে সিনেমার সাথে জড়িত মানুষগুলো নিজেদের আরো সমৃদ্ধ করার রসদ পাবে।
জয় হোক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের।
লেখকঃ কলামিস্ট, নাট্যকার, অভিনেতা।