গতকাল তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বুকের ভেতরটায় কেমন শুন্য মনে হচ্ছিলো, মোচড় দিচ্ছিল, কোথায় যেন একটা ব্যাথার অনুভুতি হচ্ছিলো। কারণ, নায়ক হবার অনেক আগে থেকেই সালমান শাহ’র সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবির এর পারিবারিক বন্ধু ছিলেন সালমানের বাবা-মা। “পরিনীতা” ছবির শুটিং এর সময় (আমি এ ছবির সহকারি পরিচালক), মাঝে মাঝে সালমানের আম্মা নীলা চৌধুরী রান্না করা খাবার নিয়ে উপস্থিত হতেন। কোন অহংকার বা ভেদাভেদ ছিলনা, সবাইকে হাসিমুখে ডেকে একসঙ্গে খাওয়াতেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে যে তথ্যচিত্রটি কবির ভাই নির্মাণ করেছিলেন, আমি তাতেও সহকারি পরিচালক। সেই তথ্যচিত্রের শেষ অংশে ব্রহ্মপুত্র নদ, জয়নুল সংগ্রহশালা ও কিছু পেইন্টিং আর টাইটেলের উপর যে গানটি ওভার ল্যাপ করা হয়েছে, সেটি নীলা চৌধুরী’র গাওয়া। পিয়ং ইয়ং ফেস্টিভ্যাল সামনে রেখে যে মুক্ত দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি কবির ভাই নির্মাণ করছিলেন (তখন সাংবাদিক হিসেবে চাকুরী করা স্বত্বেও, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করি), সেই ছবির বিষয় ছিল আমলা পরিবার এবং চাকুরী প্রত্যাশী মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই ভাইবোন। এ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছিলেন সালমানের বাবা-মা, অমিত হাসান ও টিনা। অনেক শুটিং তাদের বাড়িতে হতো। কবির ভাই এর ছেলে লেনীনের সঙ্গে ছিল সালমানের বন্ধুত্ব। আমার সঙ্গেও তখন থেকেই তার জানাশোনা। চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আসার পর সেই জানাশোনাটা এক লহমায় ঘনিভুত হতে সময় লাগেনি। এফডিসিতে রাতে বৃষ্টি হলে খুঁজে বের করে বা দূরে শুটিং হলে, আমাকে তার গাড়িতে করে বসায় পৌঁছে দেয়া, নিজের পরিকল্পনা শেয়ার করা, মতামত নেয়া’র বিষয় গুলো অহরহই ঘটতো। তবে, সম্মান আর স্নেহের বাঁধনটা অটুট রেখে।
মৃত্যুর আগের দিন, বৃহস্পতিবার বিকেলে, এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে দীর্ঘক্ষণ গল্প করেছি আমরা। ওমর সানি আর শাবনুরের ডাবিং ছিলো ভিন্ন ভিন্ন ছবির। উত্তম আকাশ, প্রযোজক পরিচালক প্রয়াত মিজানুর রহমান খান দীপু (সাবেক এম পি) সহ আমরা বেশ মজা করছিলাম। অনেক মজা করছিলো সালমান। ওমর সানি আর শাবনুর ডাবিং এর ফাঁকে ফাঁকে এসে সামিল হচ্ছিলো সেই আড্ডায়।
পরদিন শুক্রবার প্রথমবারের মতো পপির সঙ্গে একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হবে সে। বাদল খন্দকারের একটি নতুন ছবিতে। এটা নিয়েও মজা হছিলো। কিন্তু, পরদিন এলো সেই বিস্ময়কর দুঃসংবাদ। বিশ্বাস করা কস্টকর। সালমান আত্মহত্যা করার মানুষ নয়। অত্যন্ত দৃঢ়চেতা একজন। মৃত্যুটা যেভাবেই ঘটুক না কেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সে আত্মহত্যা করেনি।
তাই, তার মৃত্যুর পর নিজ কাগজে পাওয়া দ্বায়িত্বের বাইরে আমি কিছু লিখিনি। শুধু বন্ধু ইমরুল শাহেদের অনুরধে “আনন্দ বিচিত্রা”য় লিখেছিলাম একটা বিশেষ প্রতিবেদন। বিচিত্রা ও আনন্দ বিচিত্রা’র মুল প্রতিবেদন ইমরুল নিজে লিখেছিল। এর বাইরে আজ পর্যন্ত সালমান শাহকে নিয়ে আমি কিছু লিখিনি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েও কষ্ট হচ্ছিলো। আমার কাছে সালমান যেন এখনও জীবন্ত। মহান আল্লাহ যেন তাঁর আত্মাকে শান্তিতে রাখেন।
সূত্রঃ লেখক, কাহিনীকার, সাংবাদিক মুজতবা সউদ’র ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।