শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
নন্দিত গীতিকবি মিলন খানের আজ শুভ জন্মদিন ভালোবাসি তোমায় সিনেমার ক্যামেরা ক্লোজ চৌদ্দগ্রাম প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন তৌহিদ সভাপতি, সম্পাদক সোহাগ, সাংগঠনিক ফারুক গানের হাট অডিও স্টুডিও এর শুভ উদ্বোধন হলো চলচ্চিত্রে অনুদানের অজুহাতে রাষ্ট্রীয় অর্থের হরিলুট: সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী গান বাজনা সম্পর্কে কিছু কথা প্রসঙ্গ শুভ্র দেবের একুশে পদকঃ ফরিদুল আলম ফরিদ শেখ কামাল হোসেন এর কথা ও সুরে, চম্পা বণিক এর গাওয়া ‘একুশ মানে’ শিরোনামের গানটি আজ রিলিজ হলো নোয়াখালীতে প্রসূতিসহ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিকের মামলা, তদন্তে পিবিআই ‘দম’ সিনেমা নিয়ে ফিরছেন পরিচালক রেদওয়ান রনি

কালো আইন মুসলমানের কবরস্থ হওয়ার অধিকারটাও কেড়ে নিলো

সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী
  • প্রকাশ সময়ঃ সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীঃ

ঢাকার বনানী কবরস্থানে আমার দাদা, দাদী, আব্বা, আম্মা শায়িত। এগুলো কেনা কবর। এতোকাল ভেবেছি, অন্তত এই শহরে শেষ নিদ্রায় শায়িত হওয়ার একটা জায়গা আছে।

নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ আমার একমাত্র ছোটভাই সোহেল চৌধুরী পরলোকগমন করে। স্বভাবতই তাকে বনানী কবরস্থানে দাদা ও আব্বার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করার সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই মিলে। এরপর সহকর্মী তাজুল ইসলাম ছুটে গেলো বনানী কবরস্থানে। কিন্তু তাকে বলা হলো, দাদা-দাদীর কবরে নাতি কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের আর কাউকেই কবর দেয়া যাবেনা। কথাটা শোনার পর শোকের ওই সময়েই হৃদয় বিদ্রোহ করে উঠলো। এভাবে কালো আইনের মাধ্যমে আমাদের সমাহিত হওয়ার অধিকারটুকুই কেড়ে নিলো কোন পাষণ্ড?

ঢাকা শহরে এমনিতেই কবরের জায়গা খুব সীমিত। মুসলমানের এক কবরের ওপর বছরের-পর-বছর অন্যদের কবরস্থ করার প্রথা চলছে যুগযুগ ধরে। আজ আমাদের ওই ধর্মীয় প্রথা এবং কবরস্থ হওয়ার অধিকারটাও লুণ্ঠিত। এ কেমন নির্মমতা? এ কেমন দানবীয় আচরণ? এই আইন চালু করেছে কারা? শুধু কি ঢাকা সিটি করপোরেশন নাকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক গোষ্ঠী? কেনো এমনটা করা হলো? কার নির্দেশে? কে আমাদের কবরস্থ হওয়ার অধিকার কেড়ে নিলো? এসব প্রশ্ন আমি কার কাছে করবো?

বনানী কবরস্থানে এখন একটা কবরের দাম দেড় কোটি টাকা হলেও কবর দেয়ার মতো জায়গা নেই। ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটা কবরের দাম পঁচিশ থেকে পঁচাত্তর লাখ। তাও এটা স্থায়ী নয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর সেখানে অন্য কাউকে সমাহিত করার লক্ষে একই কবর কেনো আবার বিক্রি করবে কর্তৃপক্ষ। কি ভয়ঙ্কর আইন! জঘন্যতম পিশাচি প্রথা! এসব করছে কারা?

নষ্ট-দুর্বৃত্ত রাজনীতি আর দুর্গন্ধযুক্ত প্রশাসন এভাবেই ক্রমশ আমাদের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নিচ্ছে। কখনো প্রকাশ্যে আর কখনো গোপনে। আমরা ভুক্তভোগী হওয়ার আগে জানতেও পারছিনা অনেক কিছুই।

কবরেরও উত্তরাধিকার হয়, এটারও আইন আছে, এসব জঘন্য কথা ভাবা যায়? কিন্তু এই বাংলাদেশে এসবই ঘটছে। ঘটে চলেছে, আমাদের অজান্তে। আমরা যেহেতু সাধারণ জনগন তাই এসবের প্রতিবাদ করার অধিকারটাও নেই আমাদের। সহজ ভাষায় যদি বলি, স্বাধীন এই বাংলাদেশে আমরা সবাই পরাধীন গোলাম। নিঃশর্ত ক্রীতদাস। শাসকগোষ্ঠী আমাদের সাথে যেকোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করতে পারছে। এসবের প্রতিবাদ করার শক্তি নেই আমাদের কারো। ত্রিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তের বিনিময়ে আমরা এমনই এক দেশের মালিক হয়েছি, যে দেশের ওপর আদতে আমাদের কোনোই অধিকার নেই।

একজন মুসলমানের কবরে অন্য আরেক মুসলমানকে সমাহিত করার বিষয়ে একজন আলেমকে প্রশ্ন করে নিম্নোক্ত উত্তর পেয়েছি:

“বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে যেখানে মৃত্যুর হার বেশি, জনবহুল এলাকা অথবা অনেক বেশি লাশ আসে, সে ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও এক বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া থাকে। এক বছর পর কবর খুঁড়ে আবার সেখানে অন্যদের কবরস্থ করা হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে মূলত লাশের চাপের ওপর বা অবস্থানের ওপর। এটা শর্ত নয় যে এত সময় পর্যন্ত রাখতে হবে। এটা নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার ওপর। কোথাও কোথাও এক বছর, আবার কোথাও কোথাও দুই বছর পর্যন্ত রাখে।

“তবে যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো, যদি কোনো কবর খোঁড়ার পর কবরে লাশ পাওয়া যায়, তবে সেখানে আর কবর দেওয়া যাবে না। ওই লাশ ওইখানে রেখে দিতে হবে। যে কবর খোঁড়ার পরে দেখবে সেখানে লাশ নেই, হয়তো কিছু হাড় বা শরীরের কিছু অবশিষ্ট অংশ পাওয়া গেছে, তখন সেই অংশগুলো একসঙ্গে করে অন্য কোথাও পুঁতে ফেলতে হবে এবং ওই কবরে অন্যকে সমাহিত করা যাবে”।

খুব লক্ষ্য করে দেখুন উত্তরটা। এখানে বলা হয়েছে, “যদি কোনো কবর খোঁড়ার পর কবরে লাশ পাওয়া যায়, তবে সেখানে আর কবর দেওয়া যাবে না”।

কিন্তু নির্মম বাস্তবতা শুনবেন? এই ঢাকা শহরে সিন্ডিকেট হাড় ব্যবসায়ী আছে, যারা কবরস্থানগুলোয় কর্মরতদের যোগসাজসে মাত্র ২-৩ মাস পরই গোপনে কবর খুঁড়ে গোটা দেহ সরিয়ে নিয়ে এটা বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি করে, যা পরিশেষে ডাক্তারি শিক্ষার্থীদের হিউম্যানবডি এনাটমি সাবজেক্ট এর কাজে লাগানো হয়। সহজ ভাষায়, মুনাফাখোর দুর্বৃত্তগুলো মরদেহ চুরি করে এগুলো বিক্রি করে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আর এসব ভয়ঙ্কর অপতৎপরতার সাথে এবার যোগ হলো মানুষের সমাহিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়ার পিশাচি তাণ্ডব। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি যাঁরা হননি, তাঁরা আমার এই লেখার ভেতর লুকিয়ে থাকা কষ্ট, দ্রোহ ও যন্ত্রণাগুলো অনুধাবন করতে পারবেন কিনা জানিনা। যাঁরা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, তাঁরা রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মী, লেখক, সাংবাদিক কিংবা বিবেকসম্পন্ন মানুষ হলে আপনাদের সবার কাছে করজোড়ে অনুরোধ, বিষয়টা নিয়ে কথা বলুন, প্রতিবাদ করুন, সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করুন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হলেই হয়তো এই নির্মম শহরে অন্তত আমাদের সমাহিত হওয়ার অধিকারটুকু ফিরে পাবো।

লেখকঃ সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত জঙ্গিবাদ বিরোধী সাংবাদিক, কাউন্টারটেররিজম বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকা ব্লিটজ-এর সম্পাদক

দয়া করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
April 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031