সেই সময়ে মনে হলো মানুষকে সচেতন করতে নাটকের বিকল্প নেই। সেই থেকে আমাদের প্রতিটি নাটকের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। সেই সময় মনে হলো, নাটক বিনোদন মাধ্যম হলেও এর মধ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করা যায়, অধিকার আদায়ের জন্য জাগিয়ে তোলা যায়। আন্দোলনের নাটকগুলো করতে গিয়ে জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেলাম। তখন মনে হলো মানুষের সঙ্গে যুক্ত এই মাধ্যমটিতে কাজ করা যায়। এই চেতনায় তখন অভিনেতা হওয়ার গোপন বাসনা জেগেছিল।’

ইনামুল হক মনে করেন, সংস্কৃতির মাধ্যমেই একটি জাতি পরিচিত হয়। এমনকি একটি জাতিসত্তা গড়ে ওঠে। ‘সেই চেতনাই আমাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ করতে উৎসাহিত করেছে। সেভাবেই নাটককে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছি। আমি এফ এইচ হলে থাকতাম। একটি সেশনে সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। তখন থেকেই নাটকে অভিনয়, প্রযোজনা, পরে নিয়মিত নাটক লেখা শুরু করি। তখন আর নাটককে বিনোদন ভাবার সুযোগ ছিল না,’ কথাগুলো এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইনামুল হক।
১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম ‘অনেক দিনের একদিন’ নামে একটি নাটক লিখেন। সেই নাটক প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। ১৯৬৯ সালে টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

চলতে থাকে নাটক লেখা, অভিনয়। পরে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরা উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি ‘বাংলা আমার বাংলা’ নামে একটি মঞ্চনাটক লিখে অভিনয় করেছিলেন। এ ছাড়া ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও তিনি নাটক লিখেছিলেন। তিনি মনে করতেন, ‘নাটকের মধ্য দিয়েও একটি দেশকে তুলে ধরা যায়। দর্শকদের মধ্যে বেঁচে থাকা যায়। সৎ জীবন যাপন করা যায়।’
অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার ইনামুল ৭৮ বছর বয়সে ১১ অক্টোবর মারা যান। কাল সকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁকে শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। পরে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।