‘হিরো আলম’ নামটা প্রতিকী হিসেবেই বলেছেন জনাব মামুনুর রশীদ। এ ব্যপারে দ্বিমতের কোন সুযোগ নাই। একইভাবে আমি প্রতিকী হিসেবে কিছু চেনা নাম দিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। নামগুলো বলে কাউকে হেয় করছি না। মূলত প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য চেনা নামগুলো ব্যবহার করছি।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগীর মতো কোৎ করে গাওয়ার জন্য ইমরানকে (তার মতো আরো কাউকে) সিনেমার গানে টানা ব্যবহার করা হচ্ছে। তাকে না নিলে সিনেমার গান চলবে না। লাখ লাখ টাকা দিয়ে কর্ণিয়াকে ভাড়া করা হচ্ছে মঞ্চে উঠে ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’ টাইপ কাভার গান শোনার জন্য। মৌলিক গানের দৌড় নাই। তাদের আবার বিমান ভাড়া আলাদা দিতে হয়। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ দিয়ে বাংলা নাটকের সর্বকালের সেরার মান যাচাই হয়। ডিরেক্টর অমি যদি মুতে দেয়, সে মুত ধরার জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান/সিইও রা বসে আছে। টিভি এবং ইউটিউব চ্যানেল যেসব শিরোনামে এবং যেসব গল্পে নাটক প্রচার হচ্ছে, তা বাহবা পাচ্ছে ভিউয়ের বিচারে। মোশাররফ করিম, অপূর্ব, নিশোরা ‘যত বাজে স্ক্রীপ্ট এবং ডিরেক্টর, তত বেশী টাকা’ ফর্মূলায় ডুবে আছে। ভিকি জাহেদ, রাফিদের দিয়ে বিনোদনের নামে টিভি এবং ওটিটিতে ভায়োলেন্সকে বাজারজাত করে মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানুষ ভায়োলেন্স দেখে আনন্দ পাচ্ছে। কিংবা বলা যায়, মানুষকে ভায়োলেন্সে অভ্যস্ত করানো হচ্ছে। দীপঙ্কর দীপন বা শিহাব শাহিনরা, নুসরাত ফারিয়ার মাঝে সুপার সেলিব্রেটি এবং নিজেদের ক্লাস খুঁজে নিচ্ছে। রণির মতো ভাড়কে দূর্দান্ত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে লাখ টাকায় ডাকা হচ্ছে রুচিশীলদের মঞ্চে। আর এসব রুচিশীল কাজে প্রযোজক এবং স্পন্সর জুটে যাচ্ছে।
অথচ এদের দিয়ে গড়া সিন্ডিকেট চাইলে এদের দিয়ে কিংবা আরো অনেককে সুযোগ দিয়ে সম্পর্ক, হৃদ্যতা, সামাজিকতা, পাপ, পূণ্য, ঘৃণা সবকিছুরই চমৎকার সব প্রোডাকশন বাজারজাত করতে পারে। কারণ এই মানুষগুলো ভাল কিছু করার যোগ্যতা অবশ্যই রাখে। কিন্তু করবে না। করতে দেয়া হবে না। সকলের নগদে টাকা চাই। তাতে সামগ্রিক কি ক্ষতি হয়ে হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নাই।
বড় পর্দার নগ্নতার জমজমাট ব্যবসার সময় প্রযোজক, কিছু পরিচালকরা যে ভুমিকায় ছিল, ছোট পর্দার আজকের অসভ্যতার সময় প্রযোজক এবং পরিচালকদের একই ভুমিকায় দেখা যাচ্ছে। যেদিন মেলা ভেঙ্গে যাবে, সেদিন ক্ষত থেকে যাবে, আর এরা সাধু হয়ে দেখতে থাকবে। একই ভাবে বড় পর্দার নগ্নতার জমজমাট ব্যবসাকালীন তৎকালীন সিনিয়র আর্টিস্টরা যেমন চুপ কিংবা চুপসে ছিল, আজ ছোট পর্দার সিনিয়ররাও একই ভুমিকায় আছে।
গত ১০/১৫ বছরে ‘মাইয়ারে তুই অপরাধী’ সবচেয়ে আলোচিত গান। সুপার হিটের তালিকায় ‘নেশা’, ‘গাঁজা’ টাইপ শিরোনামের গান।
শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি কোন দায় এই অঙ্গনের লোকজন যেমন দেখাচ্ছে না, মিডিয়াও দেখাচ্ছে না। রুচি কি গাছে ধরে! যে সিজন এলে পেড়ে খেলেই স্বাদ মিলবে! এটা চর্চার ব্যপার। যে চর্চা উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হয়।
সাহিত্য এখনো কিছুটা শুদ্ধ চর্চায় টিকে থাকলেও কাহিনীচিত্র আর সঙ্গীতের দুনিয়া অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এই অঙ্গনগুলোর সাথে সামগ্রিকভাবে জড়িত ব্যাক্তিদের রুচির উন্নতি না হলে, অরুচি-কূরুচি প্রজন্ম এবং দর্শককে নষ্ট করবেই। সেটা বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে হোক কিংবা গাও গেরামের ছোটখাটো লোকের মাধ্যমে হোক।
আবারো বলছি, রুচি উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হয়। অর্থাৎ আপনি যা দিচ্ছেন কিংবা যা গড়ছেন, সেটাই আগামী প্রজন্মকে পরিচালিত করবে।