গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী ঘিরে বসবাসরত হাজারো শ্রমজীবী মানুষের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হলো তুরাগ নদীর তীরে গড়ে ওঠা ওয়াকওয়ে ও নদীবন্দর পার্ক। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে ভ্রমন পিপাসু মানুষদের আনাগোনা থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এখানে উপচেপড়া ভিড় হয়। কিন্তু এই জনসমাগমের মাঝেই এলাকাটি পরিণত হয়েছে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে।
রেলব্রীজ- বখাটেদের মূল আস্তানা:
স্থানীয় সূত্র জানায়, নদীর পাশের রেলব্রীজ এলাকা বখাটেদের মূল আস্তানা। রেলব্রীজের নিচে দিনরাত চলে মাদক সেবন, আর ওয়াকওয়ে এখন কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের নিয়ন্ত্রণে। ভ্রমণে আসা মানুষদের অস্ত্রের মুখে (ছুরি, চাকু, পিস্তল) ছিনতাই করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন হোসেন ডায়িং, মেহমুদ স্পিনিং, ঢাকা ডায়িং, ফাইজা বাটনসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা।
নারী শ্রমিকদের ঝুঁকি:
নারী শ্রমিকদের জন্যও নিরাপত্তা শূন্য। বিনোদন বা বৈকালিক ভ্রমনের জন্য বের হলে তারা প্রায়শই ইভটিজিং এবং যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
সাম্প্রতিক ঘটনা
• ১০ জুলাই ২০২৫: টঙ্গী বাজার ফ্লাইওভারের নিচে পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। (The Daily Star)
• ৩০ আগস্ট ২০২৫: কার্ণফুলি এক্সপ্রেস ট্রেনে ডাকাতি, এক যাত্রী আহত। পুলিশ পরে ৯ জনকে গ্রেফতার। (Dhaka Mirror)
• ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: মাশিমপুর এলাকায় সন্দেহভাজন ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। (The Daily Star)
• ২ মার্চ ২০২৫: হাজী মাজার বস্তিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক ও সন্ত্রাসের অভিযোগে ৪১ জন গ্রেফতার। (The Daily Star)
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বিনোদনের জন্য বের হওয়াই এখন ঝুঁকির ব্যাপার। একজন বলেন: “ছুটি মানেই ভয়। একটু হাঁটতে বের হলেই কে কখন চাকু ঠেকাবে বা নারী শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হবে বোঝা যায় না।”
অন্যজন জানান: “টাকা বা মোবাইল দিয়ে দিলে প্রাণে বাঁচি, না হলে মারধরও খেতে হয়।”
দ্রুত পদক্ষেপের দাবি:
এলাকাবাসী বলছেন—নদীবন্দর পার্ক, ওয়াকওয়ে ও রেলব্রীজ এলাকায় স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান জরুরি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে এই বিনোদন কেন্দ্রগুলো আরও ভয়ঙ্কর অপরাধের আবাসে পরিণত হবে।