আমিও জানি শহীদুলের কিছু হবে না।
আপনিও জানেন শহীদুলের কিছু হবে না।
শহীদুলও জানে শহীদুলের কিছু হবে না।
আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার বলে একটা জিনিস আছে। কূটনৈতিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি’। মাঝখান দিয়ে শহীদুল আলমের ইসরাইল অ্যাডভেঞ্চারটা হয়ে গেলো। দেশে ফিরে সে এটা নিয়ে ম্যালা সাক্ষাৎকার দিবে। আইডিএফ যা করেছে তা বলবে, যা করেনি তাও বলবে। তার অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে, তার তোলা ছবি নিয়ে একটা বই করবে। নিজে করবে না। অন্যজনকে দিয়ে করিয়ে নিজের নাম বসাবে। সেই বইয়ের জন্য পশ্চিমা কোন সংস্থা থেকে মোটা অংকের টাকা নিবে। ব্যবসা করবে। মূলত এটাই তার পেশা।
শহীদুল আলমের হিরোগিরি বুঝতে হলে আপনার ফ্লোটিলার অভিজাত (এলিট) পলিটিক্সটা বুঝতে হবে। নিজেকে জিজ্ঞেস করেন, “ঠিক কী কারণে ফ্রিডম ফ্লোটিলায় চড়ে সাগরপথে পিকনিক করতে যাওয়াটা একটা মানবতাবাদী কাজ?”
বীর হবার প্রধান শর্ত হলো ঝুঁকি। ঝুঁকি নিয়ে আপনি বেঁচে ফিরলে গাজী, মরলে শহীদ। যে কারণে ছাত্রনায়ক নাহিদ ইসলাম গাজী আর ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান শহীদ। তারা জীবনের রিস্ক নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হিসেবে আমি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ঝানু ডিপ্লোম্যাট হিসেবে শহীদুল আলম খুবই ভালো করে জানেন যে ইসরাইল এই অভিযানে জড়িত কোন ব্যক্তিরই ক্ষতি করবে না। হত্যা করা তো অনেক দূরের কথা। ফলে এই ফ্লোটিলায় উঠে বসায় কোন ঝুঁকি নেই।
একটা কথা ঘুরে ফিরেই আলোচনায় আসছে যে – বাংলাদেশ থেকে একমাত্র শহীদুল আলম এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন। যেন অন্যদেরকে যাওয়ার জন্য অনেক হাতে পায়ে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তারা যেতে রাজী হয়নি। ভয়ে গর্তে লুকিয়েছে।
বাংলাদেশে অন্তত কোটিখানেক যুবক আছে যারা শুধু ফিলিস্তিন যাবার সুযোগের অপেক্ষা করছে। সুযোগ পেলেই ফিলিস্তিন গিয়ে সংগ্রামে যুক্ত হবে। তারা কেউ ফ্রিডম ফ্লোটিলায় গেলো না, আজহারি হুজুর, আহমাদুল্লাহ হুজুর কেউই ফ্রিডম ফ্লোটিলায় গেলেন না, গেলেন শুধু শহীদুল আলম। সুযোগ থাকলে আহমাদুল্লাহ কি যেতেন না? আমার বিশ্বাস উনি যেতেন। কিন্তু উনাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে কাওকেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সুতরাং, কথাটা হবে – বাংলাদেশ থেকে ফ্রিডম ফ্লোটিলায় যাবার একমাত্র এলিট সুযোগ পেলেন শহীদুল আলম।
এই “এলিট” সার্কেলের না হলে শহীদুল আলম যেতে পারতেন না। পশ্চিমা নেটওয়ার্ক না থাকলে পারতেন না। এমনকি অন্য কারও যাওয়ার সুযোগ হলে শহীদুল আলম সেটাতে বাধা দিতেন এবং যে কোন মূল্যে অন্যের সুযোগ কেড়ে নেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো – উনি মুক্তিকামী সুমুদ ফ্লোটিলায় যুক্ত না হয়ে অধিক পশ্চিম ঘেষা, ইহুদি ঘেষা ফ্রিডম ফ্লোটিলায় কেন যোগ দিলেন? সুমুদ ফ্লোটিলার সবাই যখন অভিযান শেষ করে বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করছে, শহীদুল আলম কেন হিরোগিরি করতে সমুদ্রে রয়ে গেলেন? উনি কিডন্যাপ হবার দাবি করেও আইডিএফের সামনে আবার ভিডিয়ো করছেন কেমনে?
এটা তো আর মিথ্যা না যে বাঙালি জাতির গড় আইকিউ ৭৪। এখানে ফুটেজ পাবার সবচেয়ে সহজ তরিকা হলো:
১. বিদেশি হলে: বাংলাদেশ নিয়ে ভ্লগ বানান।
২. দেশি হলে: ফিলিস্তিন নিয়ে আবেগ বেচুন।
সূত্রঃ ইরফান শেখ (Irfan Sheikh) এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।