নিউইয়র্ক সিটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বুধবার সকালেই তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। ঘটনাটিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন নতুন মোড় নিচ্ছে।
ঘটনার সূচনা হয় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় রাত ১টার দিকে)। নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালে পৌঁছান আখতার হোসেন, যিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ প্রতিনিধি। ঠিক সে সময় তাকে লক্ষ্য করে হঠাৎ ডিম ছোড়া হয়। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশ সেই যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আটক করে।
গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা দাবি করেন, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি একটি সাজানো নাটক। তাদের ভাষ্যমতে, বিদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা ও নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে তাকে জড়ানো হয়েছে।
প্রবাসী আওয়ামী লীগের এক নেতা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুরু থেকেই জানতাম, মিজানুর নির্দোষ। তাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার করা হয়েছে। আজকের মুক্তির সিদ্ধান্ত আমাদের সেই দাবিকেই সত্য প্রমাণ করেছে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধেরই বহিঃপ্রকাশ। দেশের ভেতরে বিরোধপূর্ণ রাজনীতি এখন প্রবাসেও ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক মহলেও নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। বিশেষ করে নিউইয়র্কের মতো বহুজাতিক শহরে এমন ঘটনা বাংলাদেশি প্রবাসী সমাজের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, মিজানুর রহমান চৌধুরীর মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রবাসী আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে স্বস্তির সঞ্চার হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখছেন, অবশেষে সত্যের জয় হলো। অনেকে তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিদেশের মাটিতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, যা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, এটি ছিল একটি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য ছিল দলকে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিব্রত করা।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দেশীয় দ্বন্দ্ব আর প্রবাসী রাজনীতির সীমানা আলাদা নেই। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ছায়া প্রবাসেও পড়ছে, যার ফলে সেখানে বসবাসরত সাধারণ বাংলাদেশিরাও বিব্রত হচ্ছেন।
একজন অভিবাসী কমিউনিটি নেতা বলেন, আমরা চাই, প্রবাসে রাজনীতি হোক ইতিবাচক উদ্যোগের মাধ্যমে। এখানে যদি দেশীয় বিরোধকে আমদানি করা হয়, তাহলে শুধু নেতাদের নয়, পুরো কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আন্তর্জাতিক মহলেও এই ঘটনার প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এমন বিতর্কিত ঘটনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিয়ে বাইরের বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রভাবিত হতে পারে।
সবশেষে, মিজানুর রহমান চৌধুরীর মুক্তি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের জন্য স্বস্তির হলেও ঘটনাটি ঘিরে রাজনৈতিক বিরোধ কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং এটি নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। সামনে প্রবাসী রাজনীতিতে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।