ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আসনসংখ্যা না থাকায় অনেককে ভাড়া বাসায় কিংবা বাইরে থেকে এসে কষ্ট করে পড়াশোনা চালাতে হয়। এ সমস্যার সমাধানে নতুন উদ্যোগ হিসেবে ঢাবিতে নির্মিত হতে যাচ্ছে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হল, যেখানে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রী থাকার সুযোগ পাবেন। চলতি বছরের মধ্যেই এই বহুল প্রত্যাশিত হলের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি সাদিক কায়েম সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান। তিনি লিখেছেন, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন-এর আমন্ত্রণে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি, সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এবং সম্পাদকবৃন্দ ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
সভায় ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন কোষাধ্যক্ষ ও ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এইচ এম মোশারফ হোসেন। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ নানা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
ডাকসুর নেতারা বৈঠকে শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত দুটি আবাসিক হল নির্মাণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এর জবাবে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, প্রথম ধাপে ৫০০০ ছাত্রী ধারণক্ষমতার বিশাল মৈত্রী হল নির্মিত হবে। পরবর্তী ধাপে আরও দুটি আবাসিক হল নির্মাণে চীন যৌথভাবে কাজ করবে।
এছাড়াও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, গবেষণা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ কর্মসূচি চালুর সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত জানান, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কেবল অবকাঠামোগত সহযোগিতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “চীন আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। তাদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য একটি বিশাল আবাসন সুবিধা তৈরি হতে যাচ্ছে, যা শিক্ষাজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।”
সভা শেষে ডাকসুর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে চীনের রাষ্ট্রদূতের হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয়। পাল্টা শুভেচ্ছা হিসেবে ডাকসু প্রতিনিধিদেরও উপহার প্রদান করেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহল মনে করছে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে আবাসন সংকট অনেকটাই কমবে। বিশেষ করে মফস্বল থেকে আগত অসংখ্য ছাত্রী নিরাপদে ও সাশ্রয়ী পরিবেশে থাকার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কও আরও গভীর ও অর্থবহ হবে।