মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি: মেহেন্দিগঞ্জে আত্মহত্যার একটি ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ট্রাইব্যুনালে। ওই মামলায় হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জামাল উদ্দিন ঢালীকে ষড়যন্ত্রমূলক আসামি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভুক্তভোগী এবং এলাকাবাসীর আয়োজনে বৃহস্পতিবার ( বেলা ১১টার দিকে আলীগঞ্জ বাজার এলাকায় বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ঘন্টাব্যাপী ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান আলহাজ এনায়েত হোসেন হাওলাদার, উত্তর উলানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জামাল মোল্লা, গোবিন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বেলাল মোল্লা, আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার আবুল কাশেম বাবুল, হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ইউপি সদস্য তসলিম মাঝি, ডাক্তার জয়নাল আবেদীন, মোজাম্মেল হক, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতির ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ হাওলাদারসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। এ মামলা থেকে যদি চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি না দেওয়া হয় তাহলে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বক্তারা আরো বলেন, গ্রামের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ অশান্ত করতে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আশা করছি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন দিবে। গ্রামের শান্ত-শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। আমরা হয়রানিমূলক মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রসঙ্গত গত (২৬মার্চ) রোববার দুপুর আনুমানিক দেড়টার সময় উত্তর উলানিয়া ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের খোরশেদ খার মেয়ে মনিয়া খানম (১৬) এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা এটি আত্নহত্যা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নিহতের মা নারগিস বেগম বলেন, রোববার (২৬মার্চ) সকাল আনুমানিক ১০টার সময় তিনি মেয়েকে ঘরে রেখে জেলে কাডের জন্য এক ইউপি সদস্যর বাড়িতে যান, দুপুর আনুমানিক ১ টার সময় বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের দুটি দরজা ভিতর দিয়ে আটকানো একটি দরজা খোলা, তিনি খোলা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখেন তার মেয়ের গলায় ওড়না প্যাচানো আড়ার সাথে ঝুলন্ত লাশ। তা দেখে সাথে সাথে লাশটি নামিয়ে বিলাপ দিয়ে কান্না করেন। কান্নার আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসেন।
নারগিস বেগম আরও বলেন, একই বাড়ির মনির মাঝির সাথে জমি নিয়ে তাদের বিরোধ রয়েছে, ঘটনার আগের দিন বিরোধের জের ধরে তাদের ঘরের চালার টিন খুলে ফেলেছে এবং হুমকি ধামকি দিয়েছিলো। শত্রুতার জেরে মনির মাঝি তার মেয়েকে মেরে থাকতে পারে বলে জানান নিহতের মা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়াই ষড়যন্ত্র করে আদালতে এই হত্যা মামলা দিয়েছেন। পুর্বের জোড়া হত্যা মামলাকে ধামাচাপা দিতে এই মামলা ।
নিহত মনিয়া খানমের বড় ভাই ওই এলাকার জোড়া খুনের আসামী রাসেল বাদী হয়ে বরিশাল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় জোড়া হত্যা মামলার বাদীর ভাই ধুলখোলার ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালী, আফসার ঢালী, দেলোয়ার, শামিম, নিজাম ঢালী, বাবু ঢালী ও মিরাজ গোল্দারকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নং এম.পি-১১০/২০২৩ইং তারিখ ২-০৪-২০২৩। মনিয়ার লাশ উদ্ধার করার সময় পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেন পুলিশ, যাতে লেখা রয়েছে প্রিয় তোমাকে কথা দিলাম সে দিন ভুলে যাবো, যে দিন দেহ থেকে নিঃশ্বাসটা বের হয়ে যাবে, এমন কথাটি একাধিকবার লেখা রয়েছে। ওই বাড়ির কাঞ্চন মাঝি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা করছেন।
মনিয়া খানম মৃত্যুর পর তার মা নারগিস বেগম কাউকে দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে পরিষদের সদস্য লিয়াকত আলী ঢালী বলেন, কোন অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কোন ব্যক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল না করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান তারা। ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালী বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য একটি মহল মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে হয়রানি করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। আমি চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটন এবং কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।