মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
বেতন ও আবাসন ব্যবস্থার আশ্বাস জনাব হারুন অর রশীদের, ইমাম-মুয়াজ্জিনের শুকরিয়া ‘সাহস তো দ্যাহাইছি, এবার দুঃসাহস দেহাতি আইছি’- অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার যুক্তিতর্ক শুরু আজ ফ্লোটিলায় শহিদুল আলম সমাচার বালিয়াকান্দিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত, ইমামদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি হারুন অর রশিদের শুরু হচ্ছে মমতাজ মেহেদী মিস্টার এন্ড মিস গ্ল্যামার লুকস সিজন-৫ বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে বলে আত্মবিশ্বাসী তারেক রহমান অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে জবাবদিহিতার রাজনীতি গড়তে চাই : তারেক রহমান দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন প্রয়োজন : আমীর খসরু ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে চার বন্ধুর ভ্রমন কাহিনী

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে চার বন্ধুর ভ্রমন কাহিনী

মোঃ রেজাউল করিম খান (অন্তর)
  • প্রকাশ সময়ঃ শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫

জীবনের নিরস ব্যস্ততায় দিনগুলো যখন নিঃশ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে, তখন অন্তরে অদম্য টান জাগে শহরের সীমানা পেরিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার। নতুন জায়গার দেখা পাওয়া, নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ নেওয়া—এ যেন আত্মার জন্য এক নির্মল নিশ্বাস। বিদেশ ভ্রমণের কোনো বাসনা এখনো আমার মনে জন্ম নেয়নি; বরং ইচ্ছা করি, প্রথমে নিজের দেশের প্রতিটি জেলা দেখে নিই, প্রতিটি নদীর সৌন্দর্যকে আত্মস্থ করি।

যাত্রার প্রস্তাব:

ঠিক এই সময়েই প্রস্তাব এল বন্ধু ফরিদ ভাইয়ের কাছ থেকে—
“চলো, চাঁদপুর যাই। ইলিশ কিনে আনি।”

ফরিদ ভাই শুধু বন্ধু নন, তিনি সাপ্তাহিক জনতার নিঃশ্বাস-এর সম্পাদকও। সফরসঙ্গী আরও দু’জন—তন্ময় ভাই, উপ-সম্পাদক; আর গানপাগল শ্রাবণ, যাকে আমরা ভালোবেসে ডাকি পাগলা শ্রাবণ। এমন এক দল হলে ভ্রমণ তো জমবেই!

থে পথে রাতের রোমাঞ্চ

সেদিন নির্ধারিত বিকেল পাঁচটার বদলে রাত নয়টায় রওনা হলো আমাদের যাত্রা। রামপুরা থেকে তন্ময় ভাইয়ের গাড়ি ছুটল চাঁদপুর অভিমুখে। চানখাঁরপুল থেকে শ্রাবণ যোগ দিতেই দল পূর্ণ হলো। গাড়ির ভেতর গানের মৃদু সুর, আড্ডার টুকরো হাসি—সব মিলিয়ে রাতটা যেন অন্যরকম রঙে রাঙিয়ে তুলল।

এক্সপ্রেসওয়ের ফাঁকা রাস্তায় হঠাৎ এক মুহূর্তের ভয়—সামনের গাড়ির হঠাৎ ব্রেকে সবাই আঁতকে উঠলাম। তবে তন্ময় ভাইয়ের দক্ষ হাতে মুহূর্তেই সামলে গেল গাড়ি। ভয় কাটল, শুরু হলো নতুন এক মুগ্ধতা—অন্ধকারে জেগে থাকা গ্রামের পথ, হেডলাইটে ঝলমলে ধানের ক্ষেত, বাঁক নিতে নিতে সাপের মতো প্যাঁচানো রাস্তা। ভয় ও সৌন্দর্য একসাথে চলছিল আমাদের সঙ্গী হয়ে।

চাঁদপুরে প্রথম রাত

রাত প্রায় দেড়টার দিকে চাঁদপুর পৌঁছালাম। কোথায় থাকব, কী খাব—কোনো পরিকল্পনা নেই। লঞ্চঘাটে গিয়ে বিশাল সব লঞ্চ দেখে বিস্মিত হলাম। ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম; কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় কোনো হোটেলে বসে ইলিশ দিয়ে খাওয়াটা হলো বটে, তবে তৃপ্তি মিলল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভোররাত সাড়ে তিনটায় ঠাঁই হলো মদিনা বোর্ডিং-এ। একে একে সঙ্গীরা ঘুমের সাগরে ভেসে গেল, শুধু আমি আর শ্রাবণ জেগে রইলাম কিছুক্ষণ। নতুন জায়গার টান ঘুমের থেকেও প্রবল।

সকালের নদী মোহনা

সকালবেলায় তিন নদীর মিলনমুখে গিয়ে দাঁড়ালাম। পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া—তাদের স্রোতধারা যেন জীবনের তিন ভিন্ন রূপ। গাছতলায় বসে দূরে ভেসে চলা লঞ্চের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, যদি সময় থেমে যেত এখানে! মৃদু বাতাসে নদীর গন্ধে ভরে উঠল মন।

ইলিশের আসল রাজ্য

কিছুক্ষণ পরই পা রাখলাম বড় স্টেশন মাছঘাটে। আহা! কী অপূর্ব দৃশ্য—বরফের স্তূপে শুয়ে আছে সারি সারি রুপালি ইলিশ। ছোট জাটকা থেকে শুরু করে দুই কেজির টগবগে ইলিশ—সবখানে কেবল মাছ আর মাছ। ব্যবসায়ীদের কোলাহল, নিলামের ডাক, ক্রেতাদের ভিড়ে বাজার যেন জীবন্ত নদীর মতো উথাল-পাথাল।

আমরা প্রথমে দিশেহারা হয়ে গেলাম। নিলামের রীতি বুঝতে সময় লাগল, শেষে স্থানীয় দুলাল মাঝি নামের এক আড়তদারের সহায়তায় ইলিশ কেনা হলো। তন্ময় ভাই নিলেন ৩১ কেজি, আর আমি অফিস কলিগদের জন্য ২২ কেজি। বাজার ভরে উঠল সূর্যের আলোয়, আর আমাদের গাড়ি ভরে উঠল রুপালি সম্পদে।

ফেরার পথ ও শেষ পর্ব

ফেরার পথ বেছে নিলাম হাজীগঞ্জ-কচুয়া হয়ে। দুপুরে দাউদকান্দিতে খাবার সারলাম, তারপর দীর্ঘ যাত্রা শেষে রামপুরায় ফরিদ ভাইয়ের বাসায় পৌঁছালাম। সেদিন রাতেই অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য আরেক আনন্দ—তাজা ইলিশের তরকারি, ফরিদ ভাইয়ের স্ত্রীর হাতের রান্না। আহা, কী স্বাদ! ভ্রমণের ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই গলে গেল।

উপসংহার

চাঁদপুর ভ্রমণ কেবল ইলিশ কেনার স্মৃতি নয়; এটি ছিল বন্ধুত্বের হাসি-আড্ডা, অচেনা রাতের রোমাঞ্চ, নদীমাতৃক বাংলার অনন্য সৌন্দর্য আর জীবনের সরল অথচ গভীর আনন্দের একটি মহোৎসব। রুপালি ইলিশের মতোই এই ভ্রমণ আমার স্মৃতিতে দীপ্ত হয়ে থাকবে বহুদিন।

দয়া করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
October 2025
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930