গ্রাহকের প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর বাজারের বেস্টওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (বিএমসি এন্টারপ্রাইজ) মালিক মাওলানা আফজাল হোসেন (৪১)। দুই হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এই আমানত সংগ্রহ করে তা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি। আফজাল ওই এলাকার মাধবপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইয়াকুব মেম্বারের ছেলে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, চান্দহর বাজারে মজিবর রহমানের ভবন ভাড়া করে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আফজাল ২০১২ সালে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। এরপর এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখপ্রতি মাসিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। তা দিয়েই তিনি নিজের নামে গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো-ঢাকায় বালাদ মেটাল, সাভারে শেফা হোমিও হল, বালাদ ব্রেকারি, মানিকনগরে বালাদ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, মাধবপুরে ইকরা আধুনিক উচ্চবিদ্যালয়, চান্দহরে শেফা ফার্মেসি, বালাদ মুদি স্টোর। এছাড়া গার্মেন্ট ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছেন টাকা। গ্রাহক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি দেড় বছর আগে লাখপ্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা লাভে বিএমসিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। দুই-তিন কিস্তিতে লাভের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে তিনি লাভ তো দূরের কথা, মূল টাকাও পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এছাড়া স্থানীয়ভাবে কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। ওই টাকা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অনেকেই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত জমা রেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আরেক গ্রাহক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের কষ্টার্জিত প্রায় দেড় লাখ টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা রেখেছি। মালিকের গাঢাকা দেওয়ার খবর শুনে আমাদের এখন হতাশায় দিন কাটছে। তার (আফজাল) ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এলাকায় ফিরে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি ফিরছেন না। কষ্টার্জিত আমানতের টাকা ফেরত পেতে আমারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।
বিএমসি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাওলানা আফজাল হোসেন গ্রাহকদের আমানতের ৭ কোটি টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনায় ব্যবসায় ধস নামার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে এখনো ৪ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ আছে। আমি আস্তে আস্তে গ্রাহকদের আমানতের পুরো টাকা পরিশোধ করে দেব।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন, আমার জানামতে বিএমসিএস নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই এবং আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেয়নি।