সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। দেশের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জ, অন্দরমহলের ছোট ছোট গলিপথ পর্যন্ত সর্বত্রই পানিতে ডুবে যাচ্ছে এবং কাঁদা-মাটিতে পরিণত হচ্ছে।
প্রথমত, বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা জনজীবনে চরম ভোগান্তি ডেকে আনে। পানি জমে থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষত অফিসগামী ও স্কুলগামী মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছোট ছোট গাড়ি থেকে শুরু করে বড় বড় যানবাহন পর্যন্ত অনেক সময় পানিতে আটকে পড়ে, যার ফলে রাস্তায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায় না, ফলে যানবাহন চালকদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও সাইকেল চালকদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক সময় ছোট ছোট গর্তে পানি জমে থাকা অবস্থায় দেখা যায় না, ফলে এগুলোতে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
তৃতীয়ত, রাস্তার পাশের দোকানপাট ও বাসাবাড়ির মালিকদের জন্যও বৃষ্টির পানির কারণে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি ঢুকে পড়ায় দোকানের মালামাল ও বাসাবাড়ির আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও, নিকাশি ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ না করায় বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে, যার ফলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে।
চতুর্থত, সরকারী অব্যবস্থাপনার কারণে প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো অল্প বৃষ্টির চাপে ভেঙ্গে পড়ছে। জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। গত তিন দিনের ভারী বৃষ্টির ফলে রাস্তার পাশের ছোট ছোট, ডুবা বা পুকুরে পানি ভরে উছলিয়ে নিম্নাঞ্চল মুখি ধাবিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি বা অতি বৃষ্টির ফলে সাথে ঝড়ো বাতাস প্রবাহের ফলে রাস্তার ধারে বেড়ে ওঠা ছোট বড় গাছ ভেঙ্গে পুকুরে পরে যেমন গাছ পালার ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তেমনই রাস্তার উপর গাছ পড়ে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
রাজবাড়ি জেলার, পাংশা উপজেলার, মাছপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কগুলির পুরােটাই বড়াে বড়াে গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। দুই তিন দিনের বর্ষণে কিছু এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে, পানিরে চাপে বা ঝড়ো বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেঙ্গে পুকুরে নিমজ্জিত হচ্ছে। এরকম চিত্র দেখে খুব খারাপ লাগলেও কিছু বলার নেই। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও গ্রাম গঞ্জের প্রতি অবহেলা এবং অযোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব দেওয়ায় রাস্তা ঘাটের এই বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে বলে মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য গাঁড়াল গ্রাম নিবাসী হুসাইন হাবিব বিপু জানান। তিনি আরো বলেন, রাস্তা ঘাট মেরামত বা সংস্কার করার দায়িত্ব যাদের, তাদের অবহেলা, দলীয়করণ, আত্মীয়করণের কারণে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ না করায় রাস্তা গুলো সামান্য বৃষ্টিতেই ভেঙ্গে পড়ছে। যে রাস্তা দিয়ে ট্রাক বাস এর মতো ভারী যানবাহন চলাচল করতো সেই রাস্তা দিয়ে এখন একটা হোন্ড, ভ্যানগাড়ী যাওয়ার ও উপায় নাই। সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে চলাফেরা করতে হচ্ছে আমাদের এলাকার মানুষদের। রাস্তা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে কখন যেন ঘরবাড়িও ভেঙ্গে ডোবায় নিমজ্জিত হবে সেই চিন্তায় প্রহর গুনছি।
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমত, রাস্তার মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এই কাজগুলো সম্পন্ন করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে। এছাড়াও, জনগণকে সচেতন করতে হবে যাতে তারা রাস্তা ও নিকাশি ব্যবস্থায় আবর্জনা না ফেলে। সড়কের পাশে বড় গর্ত বা পুকুর খনন না করে।
সর্বোপরি, রাস্তার বেহাল দশার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। তাহলেই আমরা সাময়িক বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।