বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন

কে করবে উড়ালসড়ক, চীন নাকি পিপিপি

কাউসার আলম ঢাকা
  • প্রকাশ সময়ঃ বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্পে অর্থায়নে প্রথমে আগ্রহ প্রকাশ করে মালয়েশিয়া। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চললেও তা বেশি দূর এগোয়নি। পরে প্রকল্পটিতে অর্থায়নে এগিয়ে আসে চীন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। উভয় দেশই বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওটি) পদ্ধতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়। এরই মধ্যে প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তের পর সেতু বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে ইআরডি। তাতে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর দুই দফায় এই উড়ালসড়কের অর্থায়ন নিয়ে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের সঙ্গে কথা হয়। ইআরডির পক্ষ থেকে চীনকে এই প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব করলে দেশটি বিওটি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে সম্মত হয়। এখন পর্যন্ত চীনের ১১টি কোম্পানি অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে।

ইআরডির চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উড়ালসড়ক প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এক দিকে চীনের সঙ্গে আলোচনা, অন্য দিকে পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দেওয়াটা সাংঘর্ষিক।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, ‘ইআরডির পাঠানো চিঠি আমরা এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, প্রথমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মালয়েশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। পরে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি পিপিপিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর কী হয়েছে, সেটি আর জানা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে ২০১৭ সালের সমীক্ষায় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা, যা আরও অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

সেতু বিভাগ বলছে, সাভার উপজেলার ‘মধুমতি মডেল টাউন’-এর কাছে হবে উড়ালসড়কের মূল পয়েন্ট। সেখান থেকে একটি অংশ চলে যাবে সাভারের হেমায়েতপুরে। অপর অংশটি পুরান ঢাকার নিমতলী থেকে কেরানীগঞ্জ-ইকুরিয়া-জাজিরা-ফতুল্লা-হাজীগঞ্জ-বন্দর-মদনপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে গিয়ে ঠেকবে। এই উড়ালসড়কের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়ক ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপিত হবে।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, উড়ালসড়কটি নির্মাণে এখন এক দিকে পিপিপিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্য দিকে চীনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। ফলে নতুন করে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে (বিবিএ) জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো ভালো বিনিয়োগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে ভালো বিনিয়োগকারী পাওয়া গেলে পিপিপির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সরকারিভাবেও উড়ালসড়কটি করা হতে পারে।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, চীনের যে ১১টি কোম্পানি এ উড়ালসড়ক করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে, তারা সরাসরি যোগাযোগ করেছে। চীনা সরকারের মাধ্যমে কেউ আসেনি। সে জন্য কোনো কোম্পানিকে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না।

সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ‘ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা ভালো বিনিয়োগকারী খুঁজছি। কিন্তু পাচ্ছি না। সে জন্য বারবার সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনের কোনো কোম্পানি যদি সে দেশের সরকারের মাধ্যমে আসে, তাহলে আমরা সেই কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা দুটি পথই খোলা রেখেছি। সরকারি পর্যায়েও হতে পারে। আবার উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেও হতে পারে।’

জানা গেছে, পিপিপির মাধ্যমে এ উড়ালসড়ক বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। আবার চীনের সঙ্গেও সরকারের আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘যদি নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হয়, তাহলে খরচ ও সময় দুটোই বাড়বে। তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, ভালো বিনিয়োগকারী পাওয়া।’

দয়া করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো খবর
May 2025
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
© All rights reserved © 2023 Janatarnissash
Theme Dwonload From