কুমিল্লা সদর উপজেলার সুবর্পুণর গ্রামে এক পল্লী চিকিৎসক ও তাঁর স্ত্রীকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে সুবর্ণপুর এলাকার মীরবাড়িতে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বিল্লাল হোসেন (৬৫) ও তাঁর স্ত্রী সফুরা বেগম (৫৫)।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পল্লী চিকিৎসকের বড় ছেলে প্রবাসী আমান উল্যাহর স্ত্রী শিউলিসহ অপর এক প্রতিবেশীকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, হত্যার সঙ্গে পারিবারিক কলহ কিংবা ডাকাতির সূত্র যা-ই থাকুক না কেন দ্রুতই তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত দম্পতির বড় মেয়ে বিলকিস বেগম বাদী হয়ে শিউলি আক্তারকে প্রধান আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম।
নিহতদের মেয়ে বিলকিস বলেন, খবর পেয়ে বাড়ি এসে কথা বলে জানতে পারি, রবিবার মধ্যরাতে বৃষ্টির সময় ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত আমার বাবার ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা আমার বাবা ও মায়ের হাত-পা বেঁধে মূল্যবান জিনিস ও স্ট্যাম্পসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের খোঁজ করে। ধারণা করছি, সেগুলো না দেওয়ায় শ্বাসরোধে তাদের হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ধারণা আমার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। গত রমজানে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিউলির পারিবারিক কলহ ঘটে। সে সময় তার সঙ্গে কিছু বিষয়ে চুক্তি স্ট্যাম্পে লেখা হয়। সেসব স্ট্যাম্পের জন্য কিংবা মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতেই হত্যাকাণ্ড। তবে এ খুনের ঘটনায় কারা জড়িত তা বের করবে পুলিশ। আমি হত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তি চাই। ফাঁসি চাই।
নিহত চিকিৎসকের ভাই সুলতান আহমেদ বলেন, ‘রাত আনুমানিক ১২টায় আমার ভাতিজা বউ শিউলি আমাদের ঘরের সামনে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। সে জানায় তাদের ঘরে ডাকাত ঢুকেছে। আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি- বিল্লাল ভাইকে সোফার সঙ্গে হাত পেছনের দিকে বাঁধা। তার পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভাবিও পড়ে আছে।’
ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি মডেল থানায় নেয় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে তাদের। পুলিশসহ পিবিআই ও সিআইডি টিম বিষয়টি তদন্ত করছে।
সুবর্ণপুর এলাকার এই চিকিৎসক ও তার স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেছে প্রতিবেশী ও স্বজনরা। ৫ নম্বর পাঁচথুবী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সুবর্ণপুর এলাকার বাসিন্দা মোতাহের হোসেন বলেন, চিকিৎসক বিল্লাল হোসেন সজ্জন ছিলেন। তার কারো সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল না বলেই জানি। তারপরও যারাই তাদের হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহান সরকার জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাদের শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।
নিহত বিল্লাল হোসেন ও সফুরা বেগমের দুই মেয়ে বিলকিস ও বিনু স্বামীর বাড়িতেই থাকেন। খবর পেয়ে বাবার বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিল্লাল হোসেনের ছোট মেয়ে বিনু আক্তার বলেন, প্রশাসনের কাছে জোর দাবি আমার বাবা-মায়ের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।