১. “এই মানুষে সেই মানুষ আছে কত মুনি ঋষি চার যুগ ধরে বেড়াচ্ছে খুঁজে।” ২. “আমার আপন খবর আপনার হয়না একবার আপনারে চিনলে পরে অচেনারে যায় চেনা।” রাধাশ্যামের উক্তি: “মানুষে মানুষে রয়েছে মিশে তোর নাই জ্ঞান নয়ন।” বাউল গোপীনাথের উক্তি: “আগেতে মনে বুঝে দেখ না খুঁজে মানুষ আছে এই মানুষে।” বাউলরা মানুষের মাঝে ‘মানুষ রতন’কে খুঁজে পেতে চায়। তাকে পাওয়ার উত্তম পদ্ধতি ‘মাধুর্য ভজন’। প্রেম-ভক্তি দিয়ে তাকে পাওয়া যায়। মানবদেহ, মানবজীবন ও পরমাত্মা সম্পর্কিত এসব ধ্যান-ধারণার মধ্যেই বাউলের আত্মদর্শন, জীবনদর্শন ও অধ্যাত্মদর্শনের পরিচয় আছে, আর এখানেই তাদের হৃদয়ধর্ম তথা মানবধর্ম বা মানবতাবাদের ভিত্তি নিহিত আছে।
বাউল গানে ইহমূখী মানবতার কথা যেমন আছে তেমনি ইহবিমুখ বৈরাগ্যের কথাও আছে। অর্থাৎ তারা যেমন মানবতাবাদী (humanist), তেমনি বৈরাগ্যবাদী (nihilist)। আপাতদৃষ্টিতে তা স্ববিরোধী মনে হতে পারে। বাউলগণ যে ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করত, তা ছিল সামন্ততান্ত্রিক। এ ব্যবস্থার ভেদাভেদের ও শোষণ-বঞ্চনার অজস্র বেড়াজালের মধ্যে এই বৈরাগ্যের ও নৈরাশ্যের বীজ নিহিত ছিল। নিষ্ঠুর সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-শাসন, ধর্মশাসনের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ আছে, কিন্তু নতুন করে গড়ার স্বপ্ন নেই। তারা পালিয়ে গিয়ে বিবাগী হয়ে জীবন কাটাতে চায়; সমাজ-সংসারে বিরাজমান হতাশা ও নৈরাশ্য তাদের এরূপ ভাবাবেগের জন্ম হয়। বাউলরা মানবজন্মকে গুরুত্ব দেয় কিন্তু সংসার বন্ধনকে মানতে চায় না।
বাউলদের নৈরাশ্যবাদ এক অর্থে মানবতাবাদের পরিপোষক। জাগতিক মোহ ভগবৎ প্রেমের পথে বাধাস্বরূপ। সংসার বন্ধন ছিন্ন করে ভগবৎ সত্তার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ বাউল সাধনার মূল লক্ষ্য। তাকে সর্বস্বভাবে না পাওয়ার জন্যেই বাউলের কল্পনা। গগন হরকরা বলেন: “আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যেরে। হারায়ে সেই মানুষে, তার উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে।”
সবশেষে এটাই বলা যায় যে এখানে ঘর নেই, পথ আছে। বাউলরা অন্তহীন পথের পথিক। সাংসারিক মানুষ ভোগের সামগ্রী না পেলে নৈরাশ্যবাদী হয়। বাউলের নৈরাশ্যবাদ ভগবৎ-সত্তাকে না জানা, না পাওয়ার জন্যে। জাগতিক মানুষের কাছে তাই তারা বিবাগী, কিন্তু নিজেদের কাছে তারা মুক্তি সন্ধানের পথিক। রবীন্দ্রনাথ তার স্বকীয় নানা সৃষ্টিতে বাউল বৈরাগীকে এরূপ মুক্তি ও আনন্দের প্রতীক রূপেই চিহ্নিত করেছেন। তারা নিজেরা মুক্ত থেকে অন্যকে মুক্তির পথ দেখায়।
“এসো নিজকে নিজে চিনি” পরিবার আয়োজিত বাউল গানের প্রতিযোগিতার আজ ১ অক্টোবর ২০২১ ইং রোজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ৩য় রাউন্ড। বাউল গানের প্রতিযোগিতাটির এটা ৩য় আসর অর্থাৎ ৩য় সিজন এবং যথারীতি অনুষ্ঠিত হচ্ছে অত্যন্ত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিগো লাইভ এ্যাপস এ।
এসো নিজকে নিজে চিনি” পরিবার আয়োজিত বাউল গানের ৩য় আসরের আয়োজনে আয়োজক কমিটিতে রয়েছেন-প্রধান উপদেষ্টা এম কে মুরাদ, আয়োজক- ইসমাইল, আলী, পাগল শরীফ, মহসিন, আরিফুল ইসলাম, জসিম, শামীম, কবির, ফরিদুল আলম ফরিদ, হক সাহেব, হাসন রাজা, পারভেজ, আলী কোলকাতা, নাজিম, সুজন বন্ধু, তোফাজ্জল হোসেন তুহিন, মুজিব শাহ্ ও দয়ালের পাগল রানা।
আসরে বিচারক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন- (১) বাউল সাধক আলমাস সরকার, (২) বাউল শিল্পী লতা দেওয়ান ও (৩) বাউল শিল্পী সুজন সরকার। অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে থাকছেন মুজিব শাহ্।
উক্ত আসরের ব্রডকাষ্টার হিসেবে সর্বক্ষণ ব্রডকাষ্টিং পরিচালনা করছেন দয়ালের পাগল রানা, উপস্থাপনায় হাসন রাজা। সমগ্র অনুষ্ঠানের মিডিয়া কাভারেজ (মিডিয়া পার্টনার) ও দিক নির্দেষনার সহযোগিতায় আছে “জনতার নিঃশ্বাস” (www.janatarnissash.com) ও জনতার নিঃশ্বাস সম্পাদক ফরিদুল আলম ফরিদ (বিগো আইডি রোমিও রাজবাড়ী)।
বাছাইপর্ব থেকে ১ম রাউন্ড এবং ১ম রাউন্ড থেকে ২য় রাউন্ড, এরপর ২য় রাউন্ড থেকে ৩য় রাউন্ডে যে ১২ জন উন্নিত হয়েছেন তারা হলেন-
১. সিঙ্গার শুভ (কিশোরগঞ্জ)
২. সিঙ্গার মুন (সিলেট)
৩. ঝুমা কলিজা (গোপালগঞ্জ)
৪. আরিফ (বাগেরহাট)
৫. প্রজাপতি (বগুড়া)
৬. সিঙ্গার রেজা (ঢাকা)
৭. বাউল মন ইদ্রিস (চাঁদপুর)
৮. আলতাফ সরকার (ফরিদপুর)
৯. সুজন (গাইবান্ধা)
১০. টুকটুকি আঁখি (রাজশাহী)
১১. কাতার প্রবাসী মোঃ ইয়াসিন (বরিশাল) ও
১২. সুরের পথিক (নাটোর)
বাউল গানের এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি শুরু হয় প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত।