‘আমি এইবার ফাউন্টেনপেন বইটা এমন একজনকে উৎসর্গ করবো যার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো পরিচয় নেই।’
প্রকাশক ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘আপনি তো সাধারণত অপরিচিত কাউকে বই উৎসর্গ করেন না। এই বিশেষ ব্যক্তিটি কে?’
হুমায়ূন আহমেদ সাবলীল গলায় বললেন, ‘সাকিব আল হাসান।’
প্রকাশক কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হঠাৎ উনাকে বই উৎসর্গ করার পিছনে কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?’
তিনি আগ্রহ নিয়ে জবাব দিলেন, ‘ক্রিকেটে এক ওভারে ছয়টি বল করা হয়। বল করা মাত্র গল্প শুরু হয়। নানান সম্ভাবনার গল্প। আউট করার সম্ভাবনা, ছক্কা মারার সম্ভাবনা ইত্যাদি। ছয়টা বল হচ্ছে ছয়টি গল্প। আমার কাছে সাকিবকে এই গল্পের সংকলন মনে হয়। এবার বুঝছো?’
‘এবার বইমেলায় আপনার তিনটি বই বের হচ্ছে। ফিকশনাল বইতে উৎসর্গ করলে মনে হয় আরো ভালো হতো। ফাউন্টেনপেন তো আপনার আত্মজীবনীমূলক বই।’
হুমায়ূন আহমেদ হাতের কলম ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, ‘সাধারণ বলপয়েন্ট কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে আর লেখা যায় না। কিন্তু ফাউন্টেনপেন কালি শেষ হলে আবার কালি ভরে লেখা যায়। সাকিব হচ্ছে আমাদের ফাউন্টেনপেন। সবাই থেমে গেলেও সাকিব থেমে যায় না। ছেলটা অদম্য, অফুরন্ত।’
সব শুনে প্রকাশক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বইয়ের উৎসর্গপত্রে কি লিখবেন সেটা ঠিক করেছেন?’
তিনি একটি কাগজে যত্ন করে লিখলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এই তরুণকে চিনি না। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি! ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান।’
প্রকাশক নিজ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করে বললেন, ‘বই উৎসর্গের ব্যাপারটা কি আমি তাকে জানাবো?’
হুমায়ূন আহমেদ অসম্মতি জানিয়ে বললেন, ‘ভুলেও এই কাজ করতে যাবা না। কিছু মানুষকে দূর থেকে ভালবাসতে হয়। ভালবাসা প্রকাশের জন্য সবসময় মানুষকে কাছে টানার প্রয়োজন নেই।’
.
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর প্রথম আলো ‘ছুটির দিনে’ সাপ্তাহিক সংখ্যায় সাকিবকে তার সেই বই উৎসর্গ সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। সাকিব আল হাসান সাংবাদিককে বলেন,
“হুমায়ূন স্যারের বই উৎসর্গ আমার জীবনে অন্যতম বড় প্রাপ্তি। স্যারের সাথে দেখা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। স্যারকে বলতে চাই জ্যোৎস্না রাতের তারা হয়ে যদি কোনো দিন তিনি আমাকে দেখতে পান, নিশ্চয়ই শুনবেন আমার কথাটাও। স্যার, আমি সাকিব। আপনার লেখার একজন ভক্ত।’
“শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র সাকিব আল হাসান❤️
সূত্রঃ ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।