অভিনেত্রী ডলি জহুর
শুভ জন্মদিন
জন্মঃ ১৭ জুলাই, ১৯৫৩
বাংলাদেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী। তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময়ে ১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয় শুরু করেন। এরপর মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। পরবর্তীতে টেলিভিশন নাটকে এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তিনি ১৬০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী এবং ঘানি (২০০৬) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।
ডলি জহুরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার গ্রিন রোডে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি মঞ্চ নাটকের সাথে যুক্ত হন।
ডলি জহুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭৪-৭৫ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি নাটকে অভিনয় করেন।এই নাটক থেকে ম. হামিদ বা নাট্যচক্রের একজনের মাধ্যমে নাট্যচক্রে যুক্ত হন এবং মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। নাট্যচক্র থেকে তার অভিনীত প্রথম নাটক লেট দেয়ার বি লাইট। সেখান থেকে তার বন্ধু (পরবর্তীতে স্বামী) জহুরুল ইসলামের সাথে যুক্ত হন কথক নাট্যগোষ্ঠীতে। কথক নাট্যগোষ্ঠী থেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রাগৈতিহাসিক অবলম্বনে মঞ্চস্থ নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটি কয়েকটি প্রদর্শনীর পর বন্ধ হয়ে যায়।[৪] পরে মামুনুর রশীদের বাংলা থিয়েটারে মানুষ নাটকে অভিনয় করেন। এসময়ে মানুষ নাটকের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি নাট্যচক্রের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ম. হামিদ নির্দেশিত অনুস্বারের পালা নাটকে কাজ করেন। মানুষ নাটকের একটি শো করতে তিনি দেশের বাইরেও যান। সেখানে আরণ্যকের ইবলিশ নাটকেরও প্রদর্শনী চলছিল। এই নাটকের অভিনেত্রী নাজমার অনুপস্থিতিতে ডলি এই নাটকেও অভিনয় করেন। পরবর্তীতে দেশে আসার পর আরণ্যকের ময়ূর সিংহাসন নাটকে প্রিন্সেস বলাকার চরিত্রে কাজ করেন এবং আরণ্যকের সাথে যুক্ত হয়ে যান।
তারপর তিনি টেলিভিশন নাটকে কাজ শুরু করেন। টেলিভিশনের জন্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম নাটক এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫) এ অভিনয় করেন। নাটকটি পরিচালনা করেন মোস্তাফিজুর রহমান।বিটিভিতে প্রচারিত এই নাটকে নিলু ভাবী চরিত্রের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে ডলি বলেন প্রথমে এই নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে তিনি রেগে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হুমায়ূন আহমেদের একক নাটক জননীতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই নাটকে তার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন মেহের আফরোজ শাওন।
ডলি জহুর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র অসাধারণ। তিনি হুমায়ূন আহমেদ রচিত শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্র (১৯৯২) এবং হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও পরিচালিত আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মোস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত শঙ্খনীল কারাগার চলচ্চিত্রে রাবেয়া চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৬ সালে তিনি কাজী মোরশেদ রচিত ও পরিচালিত ঘানি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কলুদের জীবনের নির্মম গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিতে রোকেয়া চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।২০১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে প্রচারিত শেষের রাত্রি টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। রবীন্দ্রনাথের একটি ছোটগল্প অবলম্বনে নাটকটি চিত্রনাট্য রচনা করেন এবং পরিচালনা করেন অঞ্জন আইচ।
ডলি জহুর ১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর জহুরুল ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জহুরুল ইসলাম ছিলেন একজন অভিনেতা। বিয়ের নয় বছর পর তাদের একমাত্র পুত্র রিয়াসাত জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর ডলির স্বামী জহুরুল মৃত্যুবরণ করেন।
ডলি জহুর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা
শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) – রাবেয়া
আগুনের পরশমণি (১৯৯৪) – সুরমা
নয়ন (১৯৯৫, টিভি চলচ্চিত্র) – জহুরা
লাভ স্টোরি: প্রেমের গল্প (১৯৯৫) – জাহানারা
চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬)
দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬) – তারেকের মা
প্রিয়জন (১৯৯৬) – মিসেস চৌধুরী
বিচার হবে (১৯৯৬) – রাবেয়া
আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭) – দোলার মা
স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭) – মিসেস সাদেক
অনন্ত ভালবাসা (১৯৯৯) – নাজমা
গুন্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০)
মিলন হবে কত দিনে (২০০১) – পাথরের মা
মেঘলা আকাশ (২০০১) – মেঘলার মামী
শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ (২০০১) – রেহানা আক্তার
নিরন্তর (২০০৬) – তিথির মা
হৃদয়ের কথা (২০০৬) – অধরার মা
দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) – রেহানা
কি যাদু করিলা (২০০৮) – আকাশের মা
সন্তান আমার অহংকার (২০০৮)
চাঁদের মত বউ (২০০৯) – সাগরের মা
মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯)
বস্তির ছেলে কোটিপতি (২০১০)
কমন জেন্ডার-দ্য ফিল্ম (২০১২)
একই বৃত্তে (২০১৩) – জমিদারের স্ত্রী
শেষের রাত্রি (২০১৫, টিভি চলচ্চিত্র)
এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫) – নীলু
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী – শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী – ঘানি (২০০৬)
সূত্রঃ এবিএম সোহেল রশিদ’র ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।