জন্ম আগস্ট ২২, ১৯৬০
অভিনেতা এবং সঙ্গীতশিল্পী। তিনি সংক্ষেপে বাবু নামে অধিক পরিচিত।
১৯৬০ সালের ২২ আগস্ট ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন বাবু। তার বেড়ে ওঠাও সেখানেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে স্থানীয় পর্যায়ে মঞ্চ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯৭৮ সালে ফরিদপুরের ‘টাউন থিয়েটার’ দিয়েই তার অভিনয়ের শুরু।
পাঁচ বছর পর ১৯৮৩ সালে ফজলুর রহমান বাবু ব্যাংকে চাকরি নেন এবং বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে তিনি যোগ দেন ‘আরণ্যক’ নাট্যদলে। এখানে তিনি বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘পালা’, ‘পাথর’, ‘ময়ূর’ ও ‘সিংহাসন’।
১৯৯১ সালে শুরু হয় ফজলুর রহমান বাবুর টেলিভিশন ক্যারিয়ার। সে বছর কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘মৃত্যু ক্ষুধা’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। আবু জাফর সিদ্দিকী পরিচালিত এই নাটক প্রচার হয়েছিল বিটিভিতে।
প্রথম দিকে হাস্যরসাত্মক চরিত্রে বেশি অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। তবে বর্তমান সময়ে তিনি সিরিয়াস চরিত্রেই বেশি অভিনয় করেন। আর দর্শকরাও তার গভীর অভিনয়ে বেশি ভালোলাগা খুঁজে পায়।
ফজলুর রহমান বাবু অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’, ‘৫১বর্তী’, ‘দৈনিক তোলপাড়’, ‘রঙের মানুষ’, ‘ঘরকুটুম’, ‘ব্যস্ত ডাক্তার’, ‘ঘটক পাখিভাই’ ‘হাটকুড়া’ ইত্যাদি।
চলচ্চিত্রের পর্দায় ফজলুর রাহমান বাবু নিজেকে আরও মেলে ধরেছেন। বড় পর্দায় তার অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শকদের মনে। ২০০০ সালে শুরু হয়েছিল তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার। প্রথম সিনেমার নাম ‘বিহঙ্গ’।
এরপর বাবু একে একে অভিনয় করেন নুরুল আলম আতিকের ‘চতুর্থ মাত্রা’,। আবু সাইয়ীদের ‘শঙ্খনাদ’, দিদারুল আলম বাদলের ‘না বলোনা’, এনামুল করিম নির্ঝরের ‘আহা!’, তৌকীর আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘হালদা’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ ও ‘স্বপ্নজাল’, নাদের চৌধুরীর ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’, বদরুল আনাম সৌদের ‘গহীন বালুচর’, রায়হান রাফির ‘পোড়ামন ২’ ও ‘দহন’, মিজানুর রহমান লাবুর ‘নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার’ সিনেমাগুলোতে।
এর মধ্যে ‘শঙ্খনাদ’, ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ এবং ‘গহীন বালুচর’ সিনেমার জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ফজলুর রহমান বাবু। এছাড়া তিনি দুইবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ও দুইবার আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও দক্ষ ফজলুর রহমান বাবু। ‘মনপুরা’ সিনেমায় তার গাওয়া দুটি গান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। যার সুবাদে তিনি পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৮ সালে তিনি ‘মনচোরা’ অ্যালবামে চারটি গান করেন। এরপর ২০০৯ সালে তিনি প্রথম একক অ্যালবাম ‘ইন্দুবালা’ প্রকাশ করেন।
তিনি শতাধিক বাংলাদেশি টেলিভিশন নাটক, তার সাথে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং বহু টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে নাট্যধর্মী শঙ্খনাদ এবং ২০১৬ সালে মেয়েটি এখন কোথায় যাবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সমূহ হল দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭), মনপুরা (২০০৯), অজ্ঞাতনামা (২০১৬), এবং হালদা (২০১৭)।
ফজলুর রহমান বাবু
Fazlur Rahman Babu
পুরস্কার
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২ বার)
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২ বার)
তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ওখানে তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটান। তার বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের ফলে তারা সেখান থেকে চলে আসেন।
মঞ্চনাটক এবং ব্যাংকে কর্মজীবন (১৯৭৮-১৯৮৯)
তিনি ১৯৭৮ সালে ফরিদপুরে “বৈশাখী নাট্য গোষ্ঠিতে” যোগদানের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের শুরু করেন। একই বছর, বাবু প্রথমবারের মত জাতীয় নাট্য উৎসবে অভিনয় পরিবেশন করে। এরমধ্যে, তিনি ১৯৮৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকে যোগদান করেন এবং তার কর্মস্থল ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ঢাকায় চলে আসার পর তিনি মামুনুর রশীদের “আরণ্যক নাট্যদল” মঞ্চ দলে যোগ দেন। মঞ্চে তার অভিনয়কৃত উল্লেখযোগ্য নাটক হল, নঙ্কার পালা, পাথার এবং ময়ুর সিংহাসন।
তিনি ১৯৯১ সালে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত প্রথম টেলিভিশন সোপ অপেরা হল মৃত্যুক্ষুধা।[৬] এটি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত মৃত্যুক্ষুধা অবলম্বনে নির্মিত এবং পরিচালনা করেছেন আবু জাফর সিদ্দিকী। এই নাটকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত হয়। যাই হোক, মামুনুর রশীদের ইতিকথা (১৯৯১) টেলিভিশন নাটকে তিনি পরান মাঝির চরিত্রে অভিনয় করেন। এর ফলে, তিনি সুন্দরী ও দানব নাটকেও অভিনয়ের সুযোগ পান। বাবু তার হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে বিখ্যাত কিন্তু তার দানব এবং জয় জয়ন্তীর মত মঞ্চ নাটকে তিনি গম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
বাবু ২০০০ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে টেলিভিশন এবং থিয়েটারে কাজ করে গেছেন, কিন্তু তিনি থিয়েটার অভিনয় ছেড়ে দেন যখন তার টেলিভিশনের কাজে মাসে পচিশ দিন তিনি ব্যস্ত থাকছেন। ২০০০ এবং ২০০১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বাবু প্রথম আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে কাজ করেন, মঞ্চ নাটক বিহঙ্গ নাটকে। এছাড়া বাবু তৌকির আহমেদ পরিচালিত দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই সিনেমার গল্পকার, সংলাপ রচয়িতা ও চিত্রনাট্যকার হলেন হুমায়ূন আহমেদ।
বাবু মনপুরা সিনেমায় দুইটি গান গাওয়ার মাধ্যমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বাবু তার প্রথম একক সঙ্গীত অ্যালবাম ইন্দুবালা (২০০৯)। তিনি মিশ্র সঙ্গীত অ্যালবাম মনচোর (২০০৮) এর চারটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে একাধিক গান করেছন, তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই।
সূত্রঃ অভিনেতা, লেখক এবিএম সোহেল রশিদ’র ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।