নানা মান অভিমান ও অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও চলচ্চিত্র ও নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই শক্তিমান অভিনেতা। বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রের অপ্রতিদ্বন্দী এই অভিনেতা দেশের অধিকাংশ আর্ট্ ফিল্মে অভিনয় করেছেন। কি বাণিজ্যিক কি বিকল্প ধারা সব চলচ্চিত্রে সমান দক্ষ্য এই অভিনেতার সর্ব্শেষ সিনেমা ছিল শাহানাজ কাকলীর “উত্তরের সুর”।
আদিত্য আলম মঞ্চে দীর্ঘ ৩৫ বছর অভিনয় করেছেন। আরণ্যক নাট্যদলে থাকাকালীন ওরা কদম আলী, ইবলিশ, ময়ুর সিংহাসন, জয় জয়ন্তী, খেলা খেলা, প্রাকৃতজন কথাসহ অন্যান্য নাটকের দলে শত শত শো করেছেন।দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন আদিত্য আলম।
একটানা ঈশ্বরদির পাকশিতে শুটিং শেষ করে মাত্র ফিরলেন আদিত্য আলম। আবির খান পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র “পোস্ট মাস্টার ৭১” এ একটি ব্যতিক্রমি চরিত্রে অভিনয় করছেন আদিত্য আলম। ছবি প্রসংগে এই অভিনেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “ অসম্ভব সুন্দর একটি গল্প পোস্ট মাস্টার ৭১”।
মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন পোস্ট মাস্টারের মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠার গল্প ফুটে উঠেছে ছবিটিতে। আদিত্য আলম অভিনীত আলোচিত চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম আধিয়ার, কাল সকালে, রং নাম্বার, উত্তরের সুর, আয়না, ও আমার ছেলে, আক্কেল আলির নির্বাচন, কির্তন খোলা বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাটকেও ব্যস্ত সময় পার করছেন আদিত্য আলম।
বর্তমানে প্রচারিত “শিরি ফরহাদ” ধারাবাহিকটিতে আদিত্য আলমের অভিনয় দারুনভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। খুব শিগগিরই সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত “বাসস্থান’ ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন আদিত্য আলম। তাছাড়া মিল্টন সরকার, নজরুল কোরেশী, সুরিত জাহাঙ্গীর, পাশাপাশি সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের কথা চলছে।
উল্লেখ্য যে, আদিত্য আলম নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৯ সালে। প্রথম শ্রেনীতে যখন, তখন মুকুল ফৌজের লিডার, পাশাপাশি অভিনয় করে করতেন। পরবর্তীতে স্কাউট ও রেডক্রস লিডার। ৩য় শ্রেনীতেই আদিত্য আলম সিনিয়রদের সাথে নাটকে অভিনয় করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে নিজেই দুর্বার নাট্যগোষ্ঠী নামে নাটকের দল গঠন করেন।
এই দলের সব নাটক তিনি পরিচালনা করেন। কিশোর আদিত্য আলম ছোটবেলা থেকে লেখালেখি শুরু করেন। তার লিখিত নাটক, দেওয়ানীর ককৃপনতা নাটক আশির দশকে জাতীয় পর্যায়ে ২য় ও তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান।
তিনি ৮০ দশকের শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসেন। পাশাপাশি মঞ্চ নাটক করতে থাকেন। প্রথম দৃস্টিপাত, কুশীলব ৮৯ সালে আরন্যক নাট্যদলে। আরন্যকে তার প্রথম নাটক “আইজল সখিনার পালা” হংকং এ মঞ্চায়ন হয়। পরবর্তীতে আরন্যকের অধিকাংশ নাটকে তিনি অভিনয় করেন।
মঞ্চের পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতারে ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। খ্যাতিমান পরিচালক আমজাদ হোসেনের জব্বর আলীর টাকার খেলা সহ অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেন, আদিত্য আলম।
“নদীর নাম মধুমতী’ দিয়ে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে কীর্তনখোলা, আধিয়ার, প্রানের মানুষ, কাল সকালে, রোহিঙ্গা, ওপার বাংলার ছবি “মাই ফাদাস সু” এরকম অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেন আদিত্য আলম।
স্কুল জীবন থেকে তার পুরস্কার পাওয়া শুরু হয়। জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও বিনোদন সাংবাদিকদের সবগুলো সংগঠনের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান। বাচসাস এওয়ার্ড একাধিকবার পেয়েছেন আদিত্য আলম।
ওপার বাংলার মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সাফল্যের জন্য আদিত্য বলিউডের পরিচালকদের নজরে আসেন। অচিরেই তাকে টালিগঞ্জ ও বলিউডের সিনেমায় দেখা যাবে।
আদিত্য আলম কেবল একজন অভিনেতাই নন, মানবিক কাজের জন্য তিনি দেশের একজন আলোচিত মানুষ। ৮৮ র ভয়াবহ বন্যায় তার মানবিক কাজের শুরু। দেশের যখনই বিপর্যয় ঘটে, মেডিকেল, বন্যার্ত, রোহিঙ্গা, কয়দিন আগে সিলেট, সুনামগঞ্জ, টাংগুয়ার হাওরে অসহায় মানুষের কাছে ছুটে গেছেন তিনি। কয়দিন আগে লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে মানবিক কাজের স্বীকৃতি ও সম্মাননা স্বারক তার হাতে তুলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ” মানবিক কাজ আগে। অভিনয় তো সবাই করে। কিন্তু ৮৮ সাল থেকে অভিনয়ের সাথে সাথে সমান তালে মানবিক কাজও করে আসছি। আমার মানবিক কাজের পেজের নাম, সমমনা আমরা, মানবতায় আমরা।
আদিত্য আলম অভিনয়, পরিচালনা, প্রোযোজনার, পাশাপাশি পত্রিকার কলামিস্ট, পরিবেশ গবেষক, গ্রন্থ লেখক। প্রতি বছর বইমেলায় এই অভিনেতার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।