বাউল গান মূলত বাউল সম্প্রদায়ের গান, যা বাংলা লোকসাহিত্যের একটি বিশেষ অংশ। বাউলরা তাদের দর্শন ও মতামত বাউল গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে থাকে। বাউল মতে সতেরো শতকে জন্ম নিলেও লালন সাঁইয়ের গানের মাধ্যমে উনবিংশ শতাব্দী থেকে বাউল গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন শুরু করে। তিনিই শ্রেষ্ঠ বাউল গান রচয়িতা হিসেবে বিবেচিত হন। ধারণা করা হয় তিনি প্রায় দু’হাজারের মত গান বেধেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বাউল গান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনাতে লক্ষ করা যায়। সাধারণত বাউলেরা যে সংগীত পরিবেশন করে তাকে বাউল গান বলে। বাউল গান বাউল সম্প্রদায়ের সাধনসঙ্গীত। এটি লোকসঙ্গীতের অন্তর্গত। এ গানের উদ্ভব সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না। অনুমান করা হয় যে, খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক কিংবা তার আগে থেকেই বাংলায় এ গানের প্রচলন ছিল। বাউল গানের প্রবক্তাদের মধ্যে লালন শাহ্, পাঞ্জু শাহ্, সিরাজ শাহ্ এবং দুদ্দু শাহ্ প্রধান। এঁদের ও অন্যান্য বাউল সাধকের রচিত গান গ্রামাঞ্চলে ‘ভাবগান’ বা ‘ভাবসঙ্গীত’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ এসব গানকে ‘শব্দগান’ ও ‘ধুয়া’ গান নামেও অভিহিত করেন। বাউল গান সাধারণত দুপ্রকার দৈন্য ও প্রবর্ত। এ থেকে সৃষ্টি হয়েছে রাগ দৈন্য ও রাগ প্রবর্ত। এই ‘রাগ’ অবশ্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ নয়, ভজন-সাধনের রাগ।
বাউল সম্রাট লালনের মাধ্যমেই বাউল গান সর্বসাধারণের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একেবারেই প্রচারবিমুখ লালন সাঁই তার দীর্ঘ সংগীত জীবনে অসংখ্য বাউল গান সৃষ্টি করেন যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এমনকি বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছেও লালনের গান আধুনিকতার প্রতীক হিসেবেই ধরা দিয়ে আসছে। মাটি, মানুষ, প্রকৃতি, জীবনবোধ, ধর্ম, প্রেম এবং দেশের কথাই বেশির ভাগ সময় ওঠে এসেছে লালনের গানে। লালনের গানের সংখ্যার তেমন কোন প্রামাণিক দলিল নেই। তবে তার সৃষ্ট গান অসংখ্য হওয়ায় সব গান সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। লালন সাঁই’র গান উপমহাদেশ ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতেই প্রশংসিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরেই লালনের গান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে। রবীন্দ্রনাথ লালনের গান সংগ্রহ করে ১৯২২ সালে ভারতীয় পত্রিকার হারামনি শাখায় চারভাগে ২০টি গান প্রকাশ করেন। লালন সাঁই’র বাউল গানে উৎসাহী ও অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে রবীন্দ্র-বাউল হিসেবে পরিচয় দিতেন স্বয়ং বিশ্বকবি। লালনের গানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে উপমহাদেশে অসংখ্য বাউলের আবির্ভাব ঘটে, যারা পরবর্তীতে বেশ ভালভাবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। বাউল গানকে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যেতে লালন সাঁই’র ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তার মৃত্যুর ১২৫ বছর পরও বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি লালন সাঁই’র গানের চেতনায়। এখনও তরুণ প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হয় কিংবদন্তি এ বাউলের গানের মায়ায়। যে মায়ার টানে লালনের গান আজ পর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠে লালিত হয়ে আসছে দারুণভাবে। এমনই অমূল্য গানের ভাণ্ডার বাউল গানের এ সম্রাট রেখে গেছেন, যার মাধ্যমে এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের হৃদয় আলোকিত হয়ে চলেছে।
বাউল গানের কিংবদন্তি শাহ আবদুল করিমের গান কথা বলে ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে। তিনি আধ্যাত্নিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দিন, সাধক রশিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।
বাউল গানের শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার শাহ আলম সরকার পারিবারিকভাবেই বাউল গানের সাথে যুক্ত তিনি। গান করতে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও গান নিয়েই তার পড়ালেখা বলে মনে করেন এই শিল্পী। তার পরিচিতি মূলত তার লেখা ও সুর করা সেসব গান দিয়ে যেগুলো শিল্পী মমতাজ বেগম গেয়েছেন। মমতাজের জন্য ৭০ এর বেশি অ্যালবাম তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও তিনি জানান তার নিজের অ্যালবামের সংখ্যা প্রায় ৬৫০। বৈশাখের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় রাতভর পালা গান গেয়ে থাকেন শাহ আলম সরকার। মমতাজের বাইরেও চলচ্চিত্রে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, অ্যান্ড্রু কিশোর, কনক চাঁপা আরও অনেকে গেয়েছেন তার গান।
বাংলাদেশের বাইরে তথা পশ্চিম বঙ্গের পবন দাস বাউলসহ আরো কিছু বাউল সাধক নিরন্তর বাউল গানের সাধনা করে চলেছেন যাদের সবার নাম এখানে উল্লেখ করতে পারছি না।
“এসো নিজকে নিজে চিনি” অনলাইন সংগঠন প্রায় পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে অনলাইনের বিভিন্ন এ্যাপসের মাধ্যমে বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে বাউল গান ও তার মহত্ব ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে আসছে। এই অনলাইন সংগঠনটির মূল মুখপাত্র রেজাউল করিম রানা, অনলাইন এ যাকে দয়ালের পাগল রানা হিসেবেই চেনেন সকলে। রানার উৎসাহে, উদ্দিপনায় বাংলাদেশে বসবাসকারী, প্রবাসী ও পশ্চিম বঙ্গের কিছু বাউল গান প্রেমীদের একত্রিত করে তিন বছর যাবৎ বাউল গানের প্রতিভা অন্বেষণ করে আসছে।
এবছর বিগো লাইভ এ্যাপস এ চলছে তার তৃতীয় আসর। এই আসরেও চলছে অনলাইন এ্যাপস বিগো লাইভ ব্যবহারকারী দের মধ্যে বাউল গানের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা।
“এসো নিজকে নিজে চিনি” পরিবার আয়োজিত বাউল গানের ৩য় আসরের আয়োজনে আয়োজক কমিটিতে রয়েছেন-প্রধান উপদেষ্টা এম কে মুরাদ, আয়োজক- ইসমাইল, আলী, পাগল শরীফ, মহসিন, আরিফুল ইসলাম, জসিম, শামীম, কবির, ফরিদুল আলম ফরিদ, হক সাহেব, হাসন রাজা, পারভেজ, আলী কোলকাতা, নাজিম, সুজন বন্ধু, মুজিব শাহ্ ও দয়ালের পাগল রানা।
এ আসরে বিচারক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন- (১) বাউল সাধক আলমাস সরকার, (২) বাউল শিল্পী লতা দেওয়ান ও (৩) বাউল শিল্পী সুজন সরকার।
উক্ত আসরের ব্রডকাষ্টার হিসেবে সর্বক্ষণ ব্রডকাষ্টিং পরিচালনা করছেন দয়ালের পাগল রানা, উপস্থাপনায় হাসন রাজা। সমগ্র অনুষ্ঠানের মিডিয়া কাভারেজ (মিডিয়া পার্টনার) ও দিক নির্দেষনার সহযোগিতায় আছে “জনতার নিঃশ্বাস” (www.janatarnissash.com) ও জনতার নিঃশ্বাস সম্পাদক ফরিদুল আলম ফরিদ (বিগো আইডি রোমিও রাজবাড়ী)।
বাউল গানের এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত।