নেপথ্যে ষড়যন্ত্র…
এক বছর আগেও দিনেদুপুরে এফডিসি প্রাঙ্গনে ছিলো কবরের নিঃস্তব্ধতা। কয়েকটা ক্ষুধার্ত কুকুরের আত্মকলহ ও গাছে গাছে তৃষ্ণার্ত কাকের কা-কা শব্দ আর নিয়মিত কয়েকজন প্রহরী ও কর্মচারী ছাড়া প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল একদার কর্ম কোলাহল পূর্ণ এফডিসি। হাত গুটিয়ে নিয়েছিলো সাধারণ থেকে নেতৃস্থানীয় প্রযোজকগণ। হতাশায় সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়ে দিবানিদ্রায় শায়িত, তখনই দেবদূতের মতো আবির্ভাব ঘটে একজন সেলিম খান-এর। একই সাথে শুরু করেন একাধিক সিনেমা। বহুবছর পর চলচ্চিত্র শিল্প পেয়ে যায় একজন নিয়মিত পেশাদার প্রযোজক। চলচ্চিত্রে বয়ে চলে আনন্দের জোয়ার। আজ আবার সেই জোয়ারে ভাটার টান, বিউগলে করুণ সুর। কারণ, দেশের সর্ব বৃহৎ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মকান্ড এখন অনেকটাই স্থবির। হয়তো আর হবেনা নতুন কোনো গল্পের চিত্রায়ন। নিশ্চিত করে বলা যায় মো. সেলিম খান-এর মতো নিয়মিত প্রযোজকের বিদায়ে আবারও মুখ থুবড়ে পড়বে চলচ্চিত্র অঙ্গন। সৌখিন বা অনিয়মিত দু-চারজন প্রযোজক এই বিশাল শিল্প ও জনগোষ্ঠীকে যথাযথ যোগান দিতে পারবেনা। মাত্র তিন বছরে শাপলা মিডিয়ার ব্যানারে বৃহৎ, মাঝারী ও স্বল্প বাজেটে প্রায় ৬০-৭০ টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন তিনি।
আপাদমস্তক চলচ্চিত্র প্রেমী এবং বঙ্গবন্ধু অনুরাগী এই মানুষটি ইতিমধ্যে নিজ অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর কৈশোরকাল নিয়ে “টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই” এবং জাতিরজনক ও পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে “আগস্ট ১৯৭৫” চলচ্চিত্র দু’টি নির্মাণ করে সৎসাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এই ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র দু’টি শুধু নির্মাণই করেননি, তা জনসাধারণের মধ্যে বিনামূল্যে প্রদর্শনেরও ব্যাবস্থা করেছেন।
যা গত ৫০ বছরে কেউ করেনি। আর এটাই হয়তো তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, শেষোক্ত চলচ্চিত্রটিতে তিনি পঁচাত্তরের হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ ও মুখোশ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
বিরোধী এমনকি সরকারী দলে ঘাপটি মেরে থাকা খুনিচক্র বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে চলচ্চিত্র দু’টি মুক্তির কয়েকদিনের ব্যাবধানে দিনদুপুরে শতাধিক অজ্ঞাত সন্ত্রাসী দ্বারা তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়। একই সাথে তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় নানামুখী ষড়যন্ত্র। ব্যাবসায়িক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সর্বক্ষেত্রে তাঁকে উপুর্যুপরি আঘাতে বিপর্যস্ত করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা চলছে।
করোনাকালে চলচ্চিত্র শিল্পী-কুশলীদের অসহায়ত্ব বিবেচনা করে তিনি শত সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করলে, হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়। তিনি সুদীর্ঘকাল রাষ্ট্রের সকল বৈধ নিয়ম মেনে তাঁর বিভিন্ন ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছেন এবং একাধিকবার জেলার সেরা করদাতা হিসেবেও পুরস্কৃত হয়েছেন। তাঁর আয় ও ব্যয় সম্পূর্ণ উৎপাদন ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগকৃত। তিনি অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে বেগমপাড়ার বাসিন্দা হতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কর্মহীন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ধ্বংসপ্রায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন-এর হাল ধরে জননেত্রী, দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাতকে শক্তিশালী করেছেন। আমি মনে করি, তাঁর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এর সাথে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন বিরোধী দেশী-বিদেশী অপশক্তি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ ছাড়া এসকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে, তাঁর মতো একজন ত্যাগী, সংগ্রামী তৃণমূল আওয়ামীলীগ কর্মীর টিকে থাকা দুঃসাধ্য।
লেখক: বজলুর রাশেদ চৌধুরী, চলচ্চিত্র পরিচালক।