বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত-১, আহত-২ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২৪: মনোনয়নপ্রাপ্তরা কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শিক্ষক ও গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ জেলা পরিষদের জমিতে অবৈধ দোকান সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৮৩ জন কর্মকর্তাকে রদবদল ভারতে পালাতে ৪৫ হাজার টাকা চুক্তি, ১১ বাংলাদেশিকে জঙ্গলে রেখে পালিয়েছে দালাল শক্তি-ভয় দেখিয়ে নয়, ইনসাফ-উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন : তারেক রহমান নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল বিভাগে জামায়াত ইসলাম’র আবেদন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিট খারিজ করেছে হাইকোর্ট

যখন তেলের দাম বেশি তখন ভরসা সাইকেল

সুহৃদ রোমিও
  • প্রকাশ সময়ঃ সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২
  • ২৩১ বার পড়া হয়েছে

সাইকেলের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। বাংলায় একে ‘দ্বিচক্রযান’ বলে। তিন দশক আগে চীনকে ‘সাইকেলের দেশ’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। তবে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নয়নের সাথে সাথে দেশটিতে সাইকেলের ব্যবহার কমে যায় এবং গাড়ির ব্যবহার বাড়তে থাকে। সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অবশ্য, অতিরিক্ত সাইকেল চালালে হিতের বিপরীত হতে পারে।

নিজস্ব বাহন হিসেবে সাইকেল অনেকের পছন্দ। কেউ কেউ সাইকেল চালান শখে। আবার কেউ চালান প্রয়োজনের তাগিদে। অন্যদিকে সাইকেল চালানো যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি পরিবেশবান্ধব। এছাড়া এতে জ্বালানি খরচও নেই। আর স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার জন্যও এটি সহজ বাহন।

নিয়মিত সাইকেল চালানো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, কমে রক্তচাপও। সপ্তাহে ৩৫ কিলোমিটারের মত পথ সাইকেল চালালে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় ৫০ শতাংশেরও বেশি।

এ ছাড়া শারীরিক গঠন ঠিক রাখতে বাইসাইকেল চালানোর কার্যকারিতা অনেক। প্রতিদিন কিছু সময় সাইকেল চালিয়ে আমরা সহজেই আমাদের শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখতে পারি। সাইকেল অর্থাৎ বাইসাইকেল চালানো হাঁটা এবং সাঁতার কাটার মতো একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম।

শরীরে ঘাম ঝরাতে হলে, হাত-পায়ের পেশিগুলোর জট ছড়াতে হলে আর পা ও কোমরের শক্তি বাড়াতে হলে সাইকেল চালানোর বিকল্প আর কিই বা হতে পারে। নিয়মিত হালকা-পাতলা সাইক্লিং করলে বাড়তি ওজন কমানোর পাশাপাশি হৃদপিণ্ডের সুস্থতার দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবেন আপনি। আর পা ও কোমর-পিঠ-কাঁধের জন্য সাইকেলের মতো উপকারী ব্যায়াম দ্বিতীয়টা নেই বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। সাইকেল চালালে জীবন দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি পেটের সমস্যা দূর হওয়াসহ বিভিন্ন রকম উপকার পাওয়া যায়।

যখন তেলের দাম বেশি তখন ভরসা সাইকেল

বর্তমান অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায় তেলের দাম যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে শরীরের পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় হবে সবচেয়ে বেশি। এমতাবস্তায় তেল চালিত গাড়ি বা যানবাহন এর চেয়ে বাইসাকেল ব্যবহারে সাশ্রয় হবে।

এছাড়া বাইসাইকেল চালনায় শরীরের যে উপকার হবে-

ত্বক ভালো রাখে

সাইকেল চালালে বা প্যাডলিং করলে ত্বকে ভালোমতো অক্সিজেন পৌঁছে। এটি ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

ক্যালরি পোড়ে

গবেষণায় বলা হয়, এক ঘণ্টায় ১৪ মাইল বেগে সাইকেল চালালে শরীর থেকে ৫০০ ক্যালরি ঝরে। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

আর্থ্রাইটিস

আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন? সাইকেল চালান। এটি হাঁটুর গাঁটের নড়াচড়াকে ভালো করে; পায়ের পেশির শক্তি বাড়ায়। তবে সাইকেল চালানোর আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়

নিয়মিত সাইকেল চালানো উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। এটি স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এমনকি এটি বিষণ্ণতা দূর করতেও কাজ করে।

ভালো ঘুমের জন্য

গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট সাইকেল চালালে ঘুম না হওয়ার সমস্যা কমে। আর ঘুম ভালো হলে শরীরও ভালো থাকে। মানসিক চাপও কমে যায় ঘুম ভালো হলে।

অন্ত্রের আরাম

শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে থাকলে অন্ত্রের ভেতরে প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে থাকা খাবারের প্রবাহ সহজ হয়। ফলে মলত্যাগ সহজ হয়।

মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়’য়ের গবেষণায় জানা যায়, সাইকেল চালানোর মাধ্যমে ‘কার্ডিও-রেসপিরাটরি’ বা হৃদযন্ত্র ও ফুসফসের কার্যক্রমের মাত্রা পাঁচ শতাংশ বাড়ার ফলে একজন মানুষের মেধা বাড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর কারণ হল- সাইকেল চালানোর ফলে মস্তিষ্কের ‘হিপোক্যাম্পাস’য়ে নতুন কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। মস্থিষ্কের এই অংশটি স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে, যা ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই কমতে থাকে।

উন্নত যৌনজীবন

যুক্তরাষ্ট্রের ‘কর্নেল ইউনিভার্সিটি’র বিশেষজ্ঞদের দাবি- শরীর পরিশ্রমের মধ্যে থাকলে রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যা যৌনক্ষমতা বাড়ায়।

বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, পুরুষ খেলোয়াড়দের যৌনক্ষমতা থাকে তাদের বয়সের তুলনায় দুই থেকে পাঁচ বছর কম বয়সিদের সমান। আর নারী খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে রজোবন্ধ বিলম্বিত হয় স্বাভাবিকের তুলনায় দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত।

মুটিয়ে যাওয়া রোধ করে

নিয়মিত সাইকেল চালালে আপনি মুটিয়ে যাবেন না, এমন সম্ভাবনা বেশি। এক জরিপ থেকে জানা গেছে, ৭৫ কিলোগ্রাম ওজনের একজন মানুষ প্রতি ঘন্টায় ৯.৫ মাইল গতিতে ৭৩ মাইল সাইকেল চালালে তার ওজন ০.৫ কিলোগ্রাম কমে যায়। তবে এটা প্রতিদিন করা উচিত বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা বলছে, সপ্তাহে ৩৫ মিনিট সাইকেল চালালে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। ২০ কিলোমিটার গতিতে সাইকেল চালালে ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ ক্যালরি ক্ষয় হয়। ফলে ওজন কমানো সহজ হয়। এ ছাড়া নিয়মিত সাইকেল চালালে পা ও কোমরের পেশি এবং সন্ধির ব্যথা কমে, পেশি ও সন্ধি সুগঠিত, সবল হয়। ফুসফুস ও হৃদ্‌যন্ত্রে কর্মক্ষমতাও বাড়ে। এ ছাড়া নিয়মিত সাইকেল চালালে রক্তে এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ে। ফলে মন ফুরফুরে থাকে, মানসিক চাপ কমে।

সাইকেল হাল ফ্যাশনের একটি অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। সম্ভবত পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সাইকেল চালানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় সাইকেল চালানোর মাত্রা ব্যাপক আশাব্যঞ্জক।

সাইকেলের ধরন

সাধারণত দুই ধরনের সাইকেল ব্যবহৃত হয়। একটি রোডবাইক, অন্যটি মাউন্টেনবাইক। বাংলাদেশের বাজারে জনপ্রিয় যে ব্র্যান্ডগুলোর সাইকেল পাওয়া যায়, তার মধ্যে আছে- বিএসএক্স, রমরিডা, ফরমেট, হিরো রেঞ্জার ম্যাক্স, লক্স, ডায়মন্ড ব্যাক, মেঘনা, দুরন্তসহ বিভিন্ন কোম্পানি।

বাড়িতে সাইক্লিং

শহরের রাস্তায় সাইকেল চালানো প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে আজকাল অনেকেই বাড়িতে সাইক্লিং করার যন্ত্র কিনে নিচ্ছেন। অনেকে জিমে গিয়েও সাইক্লিং করেন। এটিও প্রায় সমান উপকার দেবে। যারা নতুন সাইক্লিং মেশিন কিনেছেন বা কেনার কথা ভাবছেন তাদের জন্য কিছু পরামর্শ।

যন্ত্রটির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সাইকেলের পাশে সোজা হয়ে দাঁড়ালে আসনের উচ্চতা আপনার নিতম্বের সমান হওয়া উচিত। যখন আপনি আসনে বসবেন তখন আপনার পা দুটো প্যাডেলের সঙ্গে ২০-৩০ ডিগ্রি কোণে থাকবে। এবার আসন থেকে হ্যান্ডেলের দূরত্ব ঠিক করে নিন এভাবে যেন হ্যান্ডেল বারের ওপর আপনার আঙুলগুলো মাত্র পৌঁছে ও আপনার পুরো হাত সিট ও হ্যান্ডেলের মাঝে জায়গা হয়। হ্যান্ডেলবারের উচ্চতা যত কম হবে তত আপনার কোমরের ওপর চাপ বাড়বে। তাই কোমর ব্যথা হলে উচ্চতা একটু বাড়িয়ে নিলেই ভালো।

রাস্তায় চালানো সাইকেলের মতো ঘরের সাইকেলে গিয়ার থাকে না। বরং একটা নব থাকে, যা গতি ও রেসিসট্যান্সকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিজের জন্য আরামদায়ক একটি মাত্রা নির্দিষ্ট করুন। যদি দেখেন পা ভারী হয়ে আসছে বা ফুসফুসের ওপর বেশি চাপ পড়ছে, তবে নব ঘুরিয়ে গতি কমিয়ে নিতে দ্বিধা করবেন না। ধীরে ধীরে গতি বাড়ানো যাবে।

সাইক্লিং করার সময় আপনাকে একটু ঝুঁকতে হবে। কিন্তু পিঠ ও শিরদাঁড়া ভাঁজ না করে এক সমান্তরালে রাখার চেষ্টা করবেন।

সাইক্লিং শুরুর ৯০ মিনিট আগে হালকা কিছু স্ন্যাক্স খেয়ে নেয়া ভালো। ব্যায়ামের আগে পরে ও মাঝে প্রয়োজনে পানি পান করা যাবে। কেননা, এতে প্রচুর ঘাম ঝরে।

আরামদায়ক ও ঘাম শুষে নেয় এমন পোশাক পরুন, ট্র্যাকস্যুট পরা ভালো। হালকা সুরের গান ছেড়ে দিতে পারেন।

অতীতের অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, বছরের পর বছর বায়ু দূষণের আওতায় থাকার ফলে মানুষের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের জটিলতার পরিমাণ বেড়ে যায়। মাত্র আধা ঘণ্টার এই গবেষণায় সেই প্রভাব দেখা যায়নি, তারমানে এই নয় যে ক্ষতি হয় না। বিভিন্ন ফুসফুসের সমস্যা (যেমন অ্যাজমা) যাদের নেই তাদের জন্য এই দূষণ এড়ানোর পন্থা বলে দেওয়া হয়েছে এই গবেষণায়।

সম্ভব হলে এমন সময় সাইকেল চালান যখন রাস্তায় গাড়িঘোড়া কম থাকে। এ কারণে ভোরের দিকে সাইকেল চালানো ভালো। গাড়ির ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন। সর্বোপরি, দূষণের মাঝে সাইকেল ধীরে চালালে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। এই ক্ষতির পরিমাণ কমাতে চাইলে বেশ দ্রুত সাইকেল চালানোই উত্তম। আর দূষণ থেকে দূরে থাকাটা সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ।

দয়া করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো খবর
September 2024
S M T W T F S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© All rights reserved © 2023 Janatarnissash
Theme Dwonload From