মেহেন্দিগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি:
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে রোজার ছুটিতে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে টেন্ডার কিংবা নোটিশ ছাড়াই সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে কয়েক লাখ টাকার গাছ লোপাটের অভিযোগ স্থানীয় এমপি পংকজ নাথ’র আশীর্বাদপুষ্ট বিতর্কিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে। এমনকি গাছ কাটার আগে মিটিং কিংবা রেজুলেশন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ওই কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, কলেজে রোজার ছুটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও এ কাজ করেছেন। গাছগুলো কাটার পর কলেজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেয়নি। ব্যক্তিগত গাছ কাটতেও অনুমতি লাগবে আর আপনি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও টেন্ডারবিহীন গাছ বিক্রি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কলেজের স্বার্থে গাছ কাটা হয়েছে। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়াত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক কলেজ চত্বরের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগান। সেই গাছ পরিপক্ব হলে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম এর।
রোজার ছুটির মধ্যে হঠাৎ এসব গাছ কাটায় শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করে টেন্ডারের মাধ্যমে এ গাছ কাটা হয়নি বলেও জানান তাঁরা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেন ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সুত্র জানায় ১৯৬৬ সালে পাতারহাট রসিক চন্দ্র মহাবিদ্যালয় (আরসি কলেজ) প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে এই গাছগুলি রোপন করেন।
কলেজের দীর্ঘ সময় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম আনোয়ারুল হক। তিনি তার কলেজ ক্যাম্পাসের বাসভবনের ভিতরে অনেকগুলো রেইনট্রি গাছ রোপন করেন। যার একেকটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ লাখ টাকার উপরে।
গত ১৫ জানুয়ারি সর্বশেষ অবসরে যান সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক। তার স্থলাভিষিক্ত হন কলেজ উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চোখ পড়ে সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম আনোয়ারুল হকের স্মৃতি বিজড়িত অধ্যক্ষের বাসভবন চত্বরের বড় বড় গাাছের দিকে। দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যে তিনি ছাত্র- শিক্ষক – অভিবাবকদের নিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি সভা ডাকেন কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুরুননবীর উপস্থিতিতে সকলের নিকট গাছ কাটার অনুমতি চায় উপাধ্যক্ষ শহীদ। কিন্তু তার সেই প্রস্তাবে কেউ সারা দেয়নি। তারপরেও কলেজের উন্নয়নের কথা বলে বিভিন্ন প্রজাতির পুরানো বড় বড় গাছ কাটার পায়তারা করেন উপাধ্যক্ষ শহীদ। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক মাসে ১টি বড় চাম্বুল, ২টি বড় রেইনট্রি, দুর্লভ প্রজাতির ১টি বটবৃক্ষ, ১টি রাবার গাছ এরই মধ্যে টেন্ডার কিংবা নোটিশ ছাড়াই কেটে নিয়েছে।
আরো বেশ কয়েকটি গাছ কাটার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করে রেখেছে। সেগুলোও যে কোনো সময় কাটবে বলে ধারনা করছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অত্র কলেজের গভার্নিং বডির সভাপতি মোঃ নুরুননবীর নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার সাথে উপাধ্যক্ষ আলাপ করেছিল ক্লাসরুম উন্নয়নের জন্য একটি মরা গাছ কাটবে, কিন্তু তার বেশি গাছ কাটার কোন সুযোগ নেই। আমি গত সপ্তাহে একাধিক গাছ কাটার অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক লোক পাঠিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আবার শুনতেছি সে নাকি গাছ কাটতেছে। এটা কোনো প্রকারেই মেনে নেয়া হবেনা।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি কলেজের গাছ কেটে নেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে কলেজের পুকুর জোড়পুর্বক ভোগদখল এবং অবৈধভাবে নিয়োগ লাভসহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা অযুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের।এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের প্রশ্ন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিভাবে সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া এভাবে প্রকাশ্য কলেজের গাছ কেটে নিতে পারে?