বাচসাসের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ তেপান্তরকে পরিচালক সমিতির আঙ্গিনায় নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে যখন গণমাধ্যমকর্মীদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে উত্তেজিত হয়ে দাবি করেন ‘আহমেদ তেপান্তর কোনো সাংবাদিকই নন, তাকে আমি চিনি না’।
তার এমন কথায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সমিতির সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, সাবেক মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, পরিচালক এফ আই মানিক, মালেক আফসারী, খিজির হায়াত খান, প্রদর্শক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাট ও জনপ্রিয় নৃত্যপরিচালক সাইফুল ইসলাম।
পরিচালক সমিতির সভাপতির কার্যক্রম এমন হলে ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে টিকবে? প্রশ্ন করে সোহান বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি কাজী হায়াৎ যা করেছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমি যা শুনেছি তাতে এটা নিশ্চিত ভালো কাজ করতে গিয়ে সেটিই আহমেদ তেপান্তরের জন্য কাল হল। আগে আওলাদ সবার বিপদে এগিয়ে আসত। সেই আওলাদের জায়গাটা পরে তেপান্তরের মধ্যে ফুটে উঠেছে।’
এফ আই মানিক বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রির ভালো মানুষগুলোর সাথে তেপান্তরের সুসম্পর্ক। সে যা করে প্রোপারলি করে। সাংবাদিকতা মহান পেশা, আর সেই জায়গায় থেকে তেপান্তর সৎ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। আর তেপান্তর অহেতুক কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলে না।’
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কাজী হায়াৎ ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়নি। শাহীন সুমনের সাথে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। আমি মনে করি সমস্যা যাই হোক সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়। কমিউনিটিতে তার একটা অবস্থান আছে। তেপান্তরের সাথে যা হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক।’
বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘আহমেদ তেপান্তরের উদ্যোগেই প্রদর্শক সমিতি ও পরিচালক সমিতির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটে। তাকে না চেনার কিছু নেই। এখন কাজী হায়াৎ ভাই কেন এ কথা বললেন সেটা আমি বলতে পারব না। একজন নেতৃত্ব পর্যায়ের চলচ্চিত্রবান্ধব সাংবাদিককে পরিচালক সমিতির সভাপতির না চেনাটা আমাকে অবাক করেছে।’
সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তর ও পরিচালক কাজী হায়াৎ
খিজির হায়াত খান বলেন, ‘তেপান্তর ভাই একজন সিনেমপ্রেমী সাংবাদিক। তিনি অত্যন্ত ভালো লিখেন। তার সাথে যা হয়েছে এটা আসলে উচিত হয়নি। শাহীন ভাই ও তেপান্তর ভাইয়ের সাথে ক্যাজুয়াল সম্পর্ক। তো সে জায়গা থেকে বিষয়টা এতদূর না গড়ালেই ভালো ছিল। বিষয়টি আর না বাড়িয়ে দুইপক্ষ বসে একটা সুষ্ঠ সমাধান করা উচিত।’
এদিকে সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তরকে চেনেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তরকে আমি চিনি। তাকে না চেনার কোনও কারণ নেই।’
এ বিষয়ে সোশ্যালে প্রতিক্রিয়া জানান মালেক আফসারীও। তিনি ফেসবুকে লিখেন ‘সাংবাদিকদের সাথে সমিতির দূরত্ব বাড়ছে। কয়েক যুগের এই সম্পর্ক। বন্ধুত্ব ধরে রাখুন নইলে বদনাম হবে।’
প্রদর্শক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাট বলেন, ‘দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে হায়াৎ সাহেবের এমন কথা পাগলের প্রলাপের মতোই। আমি স্পষ্ট বলতে পারি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতির মধ্যে সমন্বয়সহ ধসে পড়া চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী অতীত পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি এই শিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে গত কয়েক বছর তার ভূমিকা প্রশংসনীয়।’
নৃত্যপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কাজী হায়াৎ আমাদের বটবৃক্ষ। আর শাহীন সুমনও ভালো মনের মানুষ। আর সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তর সরল মনের বলে সবার সঙ্গে ক্যাজুয়াল সম্পর্ক তার। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে দ্রুততম সময়ে আহমেদ তেপান্তরের উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। এছাড়াও কাজী হায়াৎ-শাহীন সুমনরা নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে দেশের সকল সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে আহমেদ তেপান্তর বলেন, ‘আমি যতদূর জানি হায়াৎ ভাই একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। তিনি সরল মনের তাকে যেভাবে বোঝানো হয়েছে তিনি সেভাবেই বলেছেন।’ তবে শাহীন সুমনের ব্যাপারে তিনি মন্তব্য এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তরকে পরিচালক সমিতির আঙিনায় নিষিদ্ধের ঘোষণার পূর্বে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে তার সাথে কথা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে উত্তেজিত বক্তব্য দেন কাজী হায়াৎ।
তিনি বলেন, ‘তেপান্তর আসলে কোন পত্রিকায় কাজ করে? আমরা যতদূর জানি সে কোন পত্রিকাতে কাজ করে না। আমার সাথে তার কোনও কথা হয়নি। শাহীনই কথা বলেছে। আমি তাকে চিনি না, জানিও না।’
সূত্রঃ দেশ রূপান্তর