*** চলচ্চিত্র: পরাণ। লাইভ টেকনোলজির ফুটেজ আবর্জনার ভিড়ে স্মার্ট ভিডিও ***
লাইভ টেকনোলজি বিগত দিনগুলোতে বেশ কিছু সিনেমা/ওয়েব কনটেন্ট বানিয়েছে। যা ছিল পুরোদমে ফুটেজের আবর্জনা। সেগুলো নির্মাতার অদক্ষতা নাকি বাজেট সংকট সেটা তারাই ভাল জানে। সেখানে রায়হান রাফি অন্ত:ত সে কলঙ্ক থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে লাইভ টেকনোলজিকে।
গাজীপুর ঝুমুর সিনেমা হলে আমার স্কুল পড়ুয়া ভাতিজা, এক বন্ধু আর তার স্ত্রী সহ সিনেমাটি দেখতে যাই। আমাদের বাইরে ১০/১৫ জন দর্শক হয়ত হবে পুরো হলে। ফলে হলের ভেতর দর্শক রিএ্যকশন মিস করেছি। তবে বিরতির সময় ধূম্রশলাকা টানতে টানতে অন্যদের আলাপ শুনছিলাম। দর্শকদের সে মতামত শেষে জানাচ্ছি।
সিনেমাটির প্রথমার্ধ খুব ধীরগতির এবং বিরক্তিকর হলেও বিরতির পর জমে উঠে। তবে মাঝেমধ্যেই খেই হারিয়েছে। দুটো গান অবশ্যই ভাল লাগার মতো ছিল কথা, সুর এবং গায়কীতে। ‘চলো নিরালায়’ এবং ‘জ্বলেরে পরাণ’। তবে চলো নিরালায় গানটার সুর টুকলি কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছি। বাদবাকি গান এবং চিত্রায়ণ এখনকার নাটকের মতো।
গল্পে টুইস্ট রাখার চেষ্টা হয়েছে। তবে সঠিক প্রয়োগ হয় নি। কারণ গল্পটা জানা। সর্বশেষ টুইস্টটা একদমই গুঁজামিলে ভরপুর। সিনেমা হয় হিউজ ফেন্টাসী না হয় বাস্তবতার কাছাকাছি। যেহেতু পরাণ ফ্যান্টাসীর বাইরের গল্প। কাজেই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আরেকটু সময় দিলে ভাল হতো।
রাজ ভাল অভিনয় করছে শুরু থেকেই। এই সিনেমাতে তার হাটুর ব্যবহারটা আলাদাভাবে দৃষ্টি কেড়েছে। মিম সুন্দরী। আর ইয়াশ ভাল অভিনেতা, তবে সিনেমাটিক নয়। শহীদুজ্জামান সেলিম গুরু মানুষ। রোজি সেলিম বোল্ড। গল্প অনুযায়ী সবারই অভিনয়ের প্রচুর সুযোগ থাকলেও, পর্দায় উঠে আসে নি। আরো জমজমাট হতে পারতো।
নাসির উদ্দিন খান ইনভেস্টিগেশনের সময় ওভারএক্টিং, আবার এর বাইরের প্রতিটি দৃশ্যে দূর্দান্ত পারফরমার। তবে ইনভেস্টিগেশনের প্রতিটি দৃশ্যের ১ম বাক্যে তিনি জাস্ট ধাক্কা দিয়েছেন।
শেষে এসে চিত্রনাট্য হোচট খেলেও, গল্প ঠিকঠাক। সংলাপ দূর্বল। সিনেমা বলতে যে সিনেমাটিক ফ্রেমিং বোঝায় তার অনুপস্থিতি ছিল পুরোটা সময়। ক্লোজ ট্রিটমেন্ট এর খরায় ভুগেছে সিনেমাটি। ফলে এক্সপ্রেশন এবং ইমোশন মারা গিয়েছে। এটাই এই সিনেমার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। হয়ত বাজেটের অভাবে কম শটে সিনেমাটি শেষ করতে হয়েছে।
সিনেমার সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে এর লোকেশন। ফ্রেমে ফ্রেমে সৌন্দর্য। কস্টিউম প্ল্যানারকে শুভকামনা জানাই। সাধারণ পোষাকের চমৎকার ব্যবহার তিনি করেছেন।
পত্রিকার ছবি স্টাবলিশ করতে গিয়ে ভিজুয়্যাল ফিল নষ্ট হয়েছে। অথচ পরাণ সিনেমার পুরোটাতেই ফিলের উপর জোর দেয়া উচিত ছিল। কোন শট কতক্ষণ থাকবে, তার কাউন্টারে এক্সপ্রেশন কি হবে, সে এক্সপ্রেশনের শট কি হবে তা নিয়ে টেবিল স্টাডি জরুরী ছিল।
ফলে সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে, ‘পরাণ’: আবেগী গল্পের আবেগহীন ভিজুয়্যাল দৃশ্যায়ন।
সবশেষে রায়হান রাফিকে শুভেচ্ছা দর্শক আকৃষ্ট করার জন্য। তার আগামী সিনেমা আরো সফলতা নিয়ে আসুক। তার সিনেমার অপেক্ষায় থাকবো।
দর্শক রি-এ্যকশন:
বিরতির সময় এবং সিনেমা শেষে কিছু দর্শক বিরক্তি প্রকাশ করছিলো। বন্ধু পত্নী পছন্দ করেছে সব মিলিয়ে। আর আমার স্কুল পড়ুয়া ভাতিজা বললো: পরের দৃশ্যে কি হবে সেটা নিয়ে সে টেনশনে ছিল। এই মিশ্র প্রতিক্রিয়াটা আমার কাছে পজেটিভ। একেকজন একেকভাবে দেখছে, একদমই বাতিল করে না দিয়ে। এই গন্ডিটা হচ্ছে মাঝামাঝি অবস্থান। এখান থেকে বেরিয়ে যখন মাস পিপলকে একই বন্ধনে আটকানো যাবে (আম্মাজান, মনের মাঝে তুমি, হৃদয়ের কথা ইত্যাদির মতো) একই ফিলিংস নিয়ে দর্শক বের হবে সেদিনই বিজয়ের পতাকা চলে আসবে সিনেমা সংশ্লিষ্টদের হাতে। সে সুসময়ের জন্য সবার প্রতি শুভকামনা জানাই।
সূত্রঃ লেখক, সাংবাদিক ও নির্মাতা তির্থক আহসান রুবেল’র ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।