বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

ধীরে ধীরে নামছে বন্যার পানি, বৃষ্টি কমায় ৫ জেলায় পরিস্থিতির উন্নতি

মাসুদ রানা জয়
  • প্রকাশ সময়ঃ শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

গত সোমবার ভরা পূর্ণিমার প্রভাবে অতি ভারী বর্ষনের সঙ্গে ভাটিতে ভারতের অধিকাংশ বাঁধ-কপাট অকস্মাত্ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোর অর্ধ কোটি মানুষ এখন নজিরবিহীন বন্যার কবলে। তলিয়ে গেছে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। ১৯৮৮ সালের পর প্রলয়ংকরী এই বন্যায় ফেনীসহ কয়েকটি জেলা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। ফলে উজানে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল,পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে। এতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার পাওয়া চিত্রমালা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, ফারাক্কা বাঁধের উজানে গঙ্গা নদীর মধ্যে স্বাভাবিক পানি রয়েছে। গতকালের চিত্রে ফারাক্কা বাঁধের উজানে বন্যার কোন চিহ্ন অবলোকন করা যায়নি। উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কিংবা উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ওপরে ভারি কোন বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পূর্বাংশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও উত্তরাঞ্চলে তিস্তা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র পাড় আপাতত বন্যা শঙ্কামুক্ত। বরং উত্তরে বন্যাপ্রবণ নদ-নদীর পানির সমতল কমছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল কমছে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল, যা আগামীকাল রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী পরশুদিন এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আপাতত এসব এলাকার উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাসও নেই। ফলে বানের কোনো আভাস নেই।

তবে বাংলাদেশের উজানে ত্রিপুরার আগরতলার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার দুটি এলাকায় আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা থাকলেও রাজ্যের অন্য কিছু এলাকায় শুধুই বজ্র-বিদ্যুত্সহ বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে ভূমিধসে। বন্যায় গৃহহীন হয়েছেন অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ। তাঁদের প্রায় ৪৫০ ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘বাংলাদেশে চলমান বন্যার জন্য তিনটি প্রাথমিক কারণ চিহ্নিত করা যায়। বন্যার পিছনে ভারত বাঁধ খুলে দেওয়া যার অন্যতম কারণ। এ বছরও তারা কোথাও কোথাও বাঁধ খুলে দিয়েছে এবং কিছু জায়গায় অতিরিক্ত পানির কারণে বাঁধের গেটগুলো ভেঙে গেছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে খুবই স্ট্রংলি ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন (এমজেও) অবস্থান করছে। এর ফলে সাগরে নিয়মিত গরম ও আর্দ্র বাতাস তৈরি হচ্ছে, যা উপকূলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।  এছাড়া মধ্য এশিয়ার উপরে ‘জেট স্ট্রিম’ এর অবস্থান রয়েছে। এর ফলে ভারতসহ বাংলাদেশে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ তিনটি কারণ একই সঙ্গে ঘটলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং এর ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, সর্বশেষ দেশে ২০১৭ সালের জুন মাসে এই তিনটি কারণ একই সাথে ঘটেছিল এবং এর কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম। যার ফলে সেই বছর চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

এদিকে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশের বন্যা ও আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। যে ধরনের পূর্বাভাস আমরা যেভাবে দিই, তাতে চলমান বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগের বিষয়টি আগাম বোঝা যায় না। আর ভারতের কাছ থেকে আমরা গঙ্গা ও তিস্তার পানিপ্রবাহের তথ্য যত বিস্তারিত পাই, গোমতী ও মুহুরীর মতো অন্য নদীগুলোর ঢল বা পানিপ্রবাহের তথ্য সেভাবে পাই না।

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, উজান থেকে আসা পানির ঢল সম্পর্কে ভারতের কাছ থেকে আমাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যেমন দরকার, তেমনি ওই ঢল আসার পর তা নামার পথও মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত যৌথ নদী কমিশন ও নদী রক্ষা কমিশন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রতিষ্ঠাগুলোকে সক্ষম ও কার্যকর করে গড়ে তোলার।

আবহাওয়া বিশ্লেষক ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামী ২৬ আগস্টের পরে ক্রমান্বয়ে বৃষ্টি হ্রাস পাবে। বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হবে। শরতের স্বাভাবিক আবহাওয়া ফিরে আসবে। আজও বৃষ্টি কম হবে। আগামীকাল কিছুটা হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

সূত্রঃ ইত্তেফাক

দয়া করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরো খবর
May 2025
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
© All rights reserved © 2023 Janatarnissash
Theme Dwonload From