আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর একটার দিকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর) এলাকায় ঘটে গেল এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
এই টা ছিলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ফাইটার জেট। এই ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা বিমান বন্দর এলাকার খুব কাছে পাব্লিক প্লেসে আর ঘটে নাই স্পেশালি বিমান বাহিনীর কোন ফাইটার বিমানের।
ফাইটার বিমানে ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির।
সদ্য বিবাহিত। আগামী মাসে প্রমোশন।
তৌকিরের বডি পাওয়া গিয়েছে দুর্ঘটনা থেকে বেশ দুরে।
শরীরের বেশ ক্ষতি হয়েছে – এক টা পা সম্ভবতঃ ভেঙে গিয়েছে কান দিয়ে রক্ত যাচ্ছে আর শরীরে পালস আছে – আই সিও তে রাখা হয়েছে।
যদি বেঁচে যায় তাহলে দুর্ঘটনার পুরো কারন জানতে পারবেন।
অনেক আহত অনেকের দেহ পুড়ে ছাই – সি এম এইছ হিম সিম খাচ্ছে বার্ন ভিক্টিম সামলাতে – সবাই আহত নিহতদের জন্য দোয়া করবেন।
আপাততঃ যা জানলাম – আজ ছিলো ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের স্বপ্ন পুরন হবার দিন – সাধারনতঃ আমরা যারা বিমান বাহিনীতে পাইলট হিসেবে যোগ দেই তাঁদের প্রথম স্বপ্ন থাকে আমরা হব একেকজন টম ক্রুজ মানে ফাইটার পাইলট –
অনেক যাছাই বাছাই কঠিন প্রশিক্ষণ শেষে এক কোর্সের হয়তো ১০ জনের মধ্যে ০৪ জন সিলেক্ট হয় ফাইটারের জন্য।
বাই দা বাই – আমার কোর্সে ছিলো ৫২ জন এবং আমার কোর্সের মাত্র আমি সহ ০৮ জন ফাইটার ট্রেনিং এর জন্য সিলেক্ট হই সেই ৯২ সালে।
যাই হোউক – দীর্ঘ বেসিক ট্রেনিং শেষে আপনাকে প্রথম বারের মতন একা ছেড়ে দেয়া হবে। এর আগে সব মিশনেই ডুয়েল ককপিটে আরেকজন পাইলট (প্রশিক্ষক) থাকেন।
তৌকিরের ট্রেনিং শেষ হয় আরো ০৩ দিন আগে – এবং সে একা ফ্লাই করার জন্য কোয়ালিফাই করে।
নিয়ম হচ্ছে যেদিন কোয়ালিফাই করে সেইদিনই প্রথম সোলো ফ্লাই করা – যেহেতু সেইদিন পরে আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায় এবং পরে দুই দিনও আবহাওয়া অনুপযোগী এবং ছুটি ছিলো তাই একা ফ্লাই করার অনুমতি পায় নাই।
যেহেতু গ্যাপ হয়ে গিয়েছে তাই আজ তৌকিরের প্রশিক্ষক প্রথমেই তৌকির কে নিয়ে আকাশে উঠেন এবং কিছু প্রেক্টিস করান।
এর পরে ইনষ্ট্রাকটর ডুয়েল সিট থেকে নেমে যান এবং তৌকির কে একা ছেড়ে দেন ওর স্বপ্ন পুরনের জন্য যেহেতু কোন ভুল করে নাই ট্রেনিং ফ্লাইটে।
তৌকিরের টেক্সি ( রানওয়ে তে যাওয়ার আগে যতটূকু পথ যেতে হয়) টেক অফ সবই ছিলো ভাল।
প্রথম একা ফ্লাই করার দিনে পুরো স্কোয়াড্রন সাজ সাজ রব থাকে ওয়েল কাম করতে – ইনষ্ট্রাকটর রানওয়ের পাশে সার্বক্ষনিক থাকে ওয়ারলেস নিয়ে যদি কোন সাহায্য বা গাইডেন্স লাগে।
তৌকির টেক অফ করার ০৫/০৭ মিনিটের মাথায় ইনষ্ট্রাকটর দেখতে পান এক ধরনের অস্বাভাবিক আচরন।
ফাইটার জেট টি বিমান বন্দরে উত্তর দিক থেকে ঘুরে দক্ষিন দিকে উচ্চতা হারাচ্ছে।
প্রশিক্ষক ওয়ারলেসে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হচ্ছিলেন।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যা হবার তাই – ফাইটার জেট টি এমন অবস্থায় ছিলো যে নিশ্চিত বিমান বন্দরের ইন্টার ন্যাশনাল পার্কিং বরাবর পড়ার কথা।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে তৌকির কিছু একটা করেছে হয়তো যা বিমান টি কে অন্য দিকে ডাইরেক্ট করেছে।
ধারনা করা হচ্ছে ফাইটার জেট টিতে কমপ্লিট কন্ট্রোল লস – পাওয়ার লস ( ইঞ্জিন ফেইল) এবং রেডিও ফেলুইর এক সাথে হয়েছে।
সাধারণত: নতুন ফাইটার পাইলট দের একা প্রথম ফ্লাইটে সব চেয়ে ভাল বিমান টি দেয়া হয়। কিন্তু তবুও কেন হলো বোঝা যাচ্ছে না।
বিমান বাহিনীর ইতিহাসে প্রথম একা ফ্লাইটে এটাই প্রথম দুর্ঘটনা।
আমি সু- সা* ড এটেমট বলতে চাচ্ছি না বা নারাজও – কারন পাইলট শেষ মুহুর্তে ইজেক্ট করেছে কারন এইসব ক্ষেত্রে বডি পাওয়া যায় না বিমানের সাথে পুরোটাই বার্ন হয়ে যায়।
পাইলট শেষ পর্যন্ত কোন কিছু চিন্তা না করে যদি আগেই বের হয়ে যেত তাহলে ক্ষয় ক্ষতি অন্যরকম হতো আর নিজেই বেঁচে যেত অক্ষত ভাবে।
বিমান বাহিনীর অনেক পাইলট জান মালের ক্ষতি কমাতে শেষ মুহুর্তে ইজেক্ট করে জীবন দিয়েছে এইরকম বহু নজীর আছে।
অনেকেই জানতে চাচ্ছিলো কি হয়েছে – আমি যতটুকু জেনেছি তা আপনাদের জানালাম – আল্লাহ নিহতদের পরিবার কে এই শোক সইবার তৌফিক যেন দেন আর আহতদের সুস্থতা দান করেন।
ধন্যবাদ
উল্লেখ্য- ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইতিমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সূত্রঃ ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ ওয়াহিদ উন নবী (স্বপন) এর ফেসবুক পোষ্ট থেকে সংগীত।